টোটোয় প্রচার।— নিজস্ব চিত্র
আম পাকে বৈশাখে আর ‘সেল’ হয় চৈত্রে। এমনটাই হয়ে এসেছে।
কিন্তু মোচের গুঁতোয় এ রকম অনেক এমনই ঘেঁটে ঘণ্ট। মুর্শিদাবাদ আর নদিয়ার বহু এলাকাতেই এখন হইহই করে সেল চলছেন।
চৈত্রে নয়, ভরা অঘ্রানে!
চৈত্র সেল মানেই লোকে বোঝে শাড়ি-জামাকাপড়। কিন্তু এই অঘ্রানে সেল চলছে মুরগির।
গত ৮ নভেম্বর রাতে নোট বাতিল হওয়া ইস্তক আমজনতা চোখের জলে নাকের জলে। মুরগির ঝোল, কাবাব, রোস্ট খাবে কে? ফলে খামারে মুরগি ঢালাও বেড়েছে। বাংলা বাজারে এখন রসিকের কোনও অভাব নেই। তেমন কেউ-কেউ ফুট কাটছে, মোদীর হাতে এত পাবলিক মুরগি হয়েছে, বাজার উপচে পড়া স্বাভাবিক!
সে যাক গে।
আসলে নোট বাতিলের পরেই তো বাজার একেবারে তলানিতে চলে গিয়েছিল। আর ভাগ্য খুলে গিয়েছিল মুরগিদের। রোজ সকাল-সন্ধে ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে গলা কাটা হচ্ছে না। সেই সুযোগে তারা সংখ্যাতেও হুড়মু়ড়িয়ে বেড়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই দাম পড়ে গিয়েছে মাংসের।
সামাল দিতে ‘আয় খদ্দের আয়’ বলে সেল দিতে নেমেছেন মুরগি ব্যবসায়ীরা। গ্রামের অলিগলি থেকে রাজপথে গাড়িতে মাইক বেঁধে, সাদা কাগজে আলতায় ‘সেল’ পোস্টার সাঁটিয়ে মুরগি বিক্রি হচ্ছে। ডোমকলে গোটা মুরগি ৭০ টাকা কেজি, কাটা মুরগি ১০০ টাকা। তাতেও যে বিপুল বিক্রি হচ্ছে, তা নয়। টোটো বা মাইকের ভাড়া বাবদ কিন্তু নগদে টাকা মেটাতে পারছেন না তাঁরা। বরং একটা করে মুরগিই ধরিয়ে দিয়েছেন।
নদিয়ার হোগলবেড়িয়া থানার স্বপনপুর গ্রামেও সেল চলছে মুরগির। গোটা মুরগি ৯০ টাকা, আর কেটে দিলে ১০০ টাকা কেজি। কৃষ্ণনগরে সেল না চললেও দাম পড়ে গিয়েছে অনেকটাই। পাত্রবাজারের ভিতরে কাটা মুরগি ১২৫-১৩০ টাকা কেজি, বাইরে ১১০-১২০ টাকা।
এর আগে এক বার এমন হয়েছিল বার্ড ফ্লু-র সময়ে। মুরগি বিক্রেতাদের আক্ষেপ, এমনিতে যা বিক্রি হয়, তার তিন ভাগের এক ভাগও হচ্ছে না। মুরগি উৎপাদক সংস্থার মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘দিনে প্রচুর টাকার খাবার খরচ হচ্ছে। তা ছাড়া মুরগি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিক্রি করতে হয়। কম দামে বিক্রি করা ছাড়া উপায় কী?’’
ডোমকলে হিতানপুরের মুরগির মাংস বিক্রেতা হইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘অন্য সময়ে দিনে দুই থেকে আড়াই কুইন্ট্যাল মাংস বিক্রি হয়। সেল দিয়েও মেরে-কেটে ১ কুইন্ট্যাল বিক্রি করা যাচ্ছে না।’’ ডোমকল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আফাজুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরাই এখন বড় মুরগি! দোকানে বসে মাছি তাড়াচ্ছি। আর ক’টা দিন এমন চললে দোকানটাই সেল করে দিতে হবে!’’