ময়না-তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেহ। নিজস্ব চিত্র
নাকের নিজে শুকনো রক্তের দাগ। ঠোঁটের উপরে চাক বেঁধে আছে লাল পিঁপড়ের ঝাঁক। মাথার নিচে বালিশ। কপালে লাল তিলক আর সমস্ত শরীরটা ধবধবে সাদা থান কাপড় দিয়ে যত্ন করে ঢাকা।
জলঙ্গির ধারে বছর তিনেকের মৃত শিশুটিকে দেখে চমকে উঠেছিলেন এলাকার কয়েক জন মৎস্যজীবী। নদীর ধারে কে এ ভাবে ফেলে গেল শিশুর মৃতদেহ! কেন তা সৎকার করা হল না? মৃতদেহ নিয়ে ক্রমশ রহস্য ঘনীভূত হতে শুরু করেছে। উঠে আসছে অজস্র প্রশ্ন। যার উত্তর এখনও স্পষ্ট নয় তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের কাছেও। জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলছেন, “মৃত্যুর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। শিশুর দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি।”
মৎস্যজীবীরা দেহ খুঁজে পাওয়ার পরেই গোটা হরনগর এলাকায় খবর ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। ভিড় করেন আশেপাশের এলাকার কয়েকশো মানুষ। খবর পেয়ে আসে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। তারা মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়। বুধবার রাত পর্যন্ত শিশুটির কোনও পরিচয় জানা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শিশুটি এই এলাকার নয়। কারণ, আশেপাশের গ্রাম থেকে প্রচুর মানুষ এসেও শিশুটিকে চিনতে পারেননি। স্থানীয় বাসিন্দা প্রফুল্ল বিশ্বাস বলছেন, “শিশুটি এলাকার নয়। সম্ভবত বাইরে থেকে কেউ এসে রেখে গিয়েছে।”
অনেক সময় সাপের বিষে মৃত্যু হলে প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী মৃতদেহ সিঁদুরের টিপ দিয়ে নতুন পোশাক পরিয়ে কলাপাতার ভেলায় নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ আছে গ্রামেগঞ্জে। অনেকে বিশ্বাস করেন, এতে মৃত মানুষ জীবিত হতে পারে। বছর দশেক আগে হরনগর গ্রামেরই এক জন সাপের বিষে মারা যাওয়ার পরে মৃতদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে গ্রামের মানুষ পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে জল থেকে সেই মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।অনেকেই মনে করছেন, মৃতদেহ অন্য কোনও জায়গা থেকে জলে ভাসতে-ভাসতে জোয়ারে এই পারে এসে ঠেকেছে। মৃত শিশুর নাক দিয়ে রক্ত বের হওয়ার চিহ্ন রয়েছে। কেন? ফলে পুলিশ গুমখুনের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না। হয়তো অপহরণের পর শিশুটিকে মেরে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসক ও পুলিশের একাংশের দাবি, জলে ডুবে মৃত্যু হলেও নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। সেখানেও প্রশ্ন উঠছে, জলে ডুবে মৃত্যু হলে সেই মৃতদেহ এ ভাবে গোপনে রাতের অন্ধকারে নদীর পারে কেউ শুইয়ে রেখে যাবে কেন? আবার রোগে ভুগে যদি মৃত্যু হয় তা হলেও দেহ সৎকার করবে না কেন পরিবারের লোক? সব মিলিয়ে কিন্তু মৃতদেহটিকে ঘিরে অনেকগুলি প্রশ্ন উঠেছে, যার উত্তর খুঁজছে পুলিশ।