নিহত তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস (ইনসেটে)।
তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনের মামলায় নার্সিংহোমে গিয়ে বিজেপি নেতা জগন্নাথ সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করল সিআইডি। গত ১ মার্চ সিআইডি তাঁকে ডাকা সত্ত্বেও দলের কাজে ব্যস্ততার কথা জানিয়ে তিনি যাননি। ওই রাতেই নার্সিংহোমে ভর্তি হন। সোমবার সেখানেই যায় সিআইডি-র একটি দল। মঙ্গলবার ছুটি পেয়ে জগন্নাথ বাড়ি ফিরেছেন।
এ দিনই কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, ওই খুনের ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে আরও আট সপ্তাহ গ্রেফতার করা যাবে না। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে যাওয়া মুকুলের বিরুদ্ধে হাঁসখালি থানায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে তিনি হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি মনোজিৎ মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, ৭ মার্চ পর্যন্ত তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না। তবে খুনের তদন্তে তাঁকে সব সহযোগিতা করতে হবে এবং তিনি নদিয়া জেলায় ঢুকতে পারবেন না।
এ দিন সরকারি কৌঁসুলি শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায় আদালতে তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট জমা দিয়ে জানান, তদন্তে বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। সেগুলি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চ তা শুনে গ্রেফতার না-করার মেয়াদ আট সপ্তাহ বাড়িয়ে দেয় এবং জানিয়ে দেয়, অন্য শর্ত অপরিবর্তিত থাকবে। মুকুলের আইনজীবী সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায় ও শুভাশিস দাশগুপ্ত জানান, মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২৪ এপ্রিল।
বিজেপির দক্ষিণ জেলা সাংগঠনিক সভাপতি জগন্নাথ সরকারকে গত ১ মার্চেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কলকাতায় ভবানী ভবনে ডেকেছিল সিআইডি। তাদের দাবি, বিধায়ক খুনে ধৃত ও মূল অভিযুক্ত অভিজিৎ পুণ্ডারীর মোবাইল ফোনের কল লিস্টে তাঁর নাম পাওয়া গিয়েছে। খুনের আগে এবং পরে বেশ কয়েক বার তাঁদের ফোনে কথা হয়েছিল। ঘটনার দু’দিন পরে, ফেরার থাকা অবস্থাতেও অভিজিৎ তাঁকে ফোন করেছিল।
জগন্নাথ সে দিন দলের কাজে কলকাতায় গিয়েছিলেন এবং ব্যস্ত থাকায় যেতে পারবেন না বলে সিআইডি-কে জানান। নদিয়ায় ফিরে ওই রাতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বুকে ব্যথার কথা জানানোয় তাঁকে রানাঘাটে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। সোমবার সেখানে গিয়েই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা। এ দিন নার্সিংহোম থেকে ছাড়া পেয়ে জগন্নাথ বলেন, “সিআইডি অফিসারেরা নার্সিংহোমে এসে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন।” তবে কী কথা হয়েছে, তা নিয়ে তিনি মুখ খোলেননি।
তবে সিআইডি সূত্রের খবর: গোয়েন্দাদের জগন্নাথ বলেছেন, তাঁকে অনেকেই ফোন করেন। সেই রকমই হয়তো অভিজিৎও ফোন করে থাকতে পারে। তবে তা যদি সত্যি হয়, সে ক্ষেত্রে তাঁদের কী নিয়ে কথা হয়ে থাকতে পারে, তা তিনি জানাতে পারেননি। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, তাঁর কথায় সন্তুষ্ট নন তদন্তকারীরা। তাই তাঁকে ফের তলব করা হতে পারে।