জখম: আবু হেনা। —নিজস্ব চিত্র।
হেলমেট না পরে দুই সঙ্গীকে নিয়ে মোটরবাইক ছোটানোয় ধরে লকআপে পোরা হয়েছিল এক যুব তৃণমূল নেতার গাড়ি-চালকের ছেলেকে। সেই অপরাধে ক্ষমা চেয়ে সাদা কাগজে সই করতে বলা হলে রাজি হননি এক সিভিক ভল্যান্টিয়ার। তাঁর হাতে ভোজালির কোপ মারার অভিযোগ উঠল তৃণমূল নেতা ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের বিরুদ্ধে।
আবু হেনা নামে ওই সিভিক ভল্যান্টিয়ার আপাতত মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর বাঁ হাতে ১০টি সেলাই পড়েছে। হয়েছে। যুব তৃণমূল নেতা সেলিম শেখ ভুট্টু-সহ চার জনের বিরুদ্ধে তিনি লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। তাদের এক জন, হেলমেট না পরে বাইক চালানো দিলদার সরকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ভুট্টু ও তাঁর দুই সঙ্গী ফেরার।
গত ২ অগস্ট বিকেলে দু’জন সিভিক ভল্যান্টিয়ারকে সঙ্গে নিয়ে ভগবানগোলা থানার সামনে রাজ্য সড়কে টহল দিচ্ছিলেন এক সাব ইনস্পেক্টর। মঙ্গলবার হাসপাতালে শুয়ে আবু হেনা বলেন, ‘‘দিলদার হেলমেট না পরে দুই সঙ্গীকে নিয়ে বিপজ্জনক গতিতে বাইকে চালিয়ে যাচ্ছিল। থামতে বললেও থামেনি।’’ খানিক পরে তারা ফিরে এলে পুলিশ পাকড়া করে থানায় নিয়ে যায়।
দিলদারের বাবা, জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি সাগির হোসেনের গাড়িচালক কালু শেখের অভিযোগ, ‘‘ওরা থানায় নিয়ে গিয়ে আমার দুই ছেলেকে বেদম মেরে লকআপে রেখে দেয়।’’ থানার একটি সূত্রের দাবি, দিলদারদের ধরার কিছুক্ষণের মধ্যেই সাগিরের ফোন আসে। তার পরেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সাগিরের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ভগবানগোলা ১ ব্লক যুব তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি ভুট্টু। তবে সাগিরের দাবি, ‘‘আমি থানায় কোনও ফোন করিনি। ভুট্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগও সাজানো।’’
আবু হেনার অভিযোগ, সোমবার সন্ধ্যায় থানা চত্বরেই ভুট্টুর নেতৃত্বে সালিশি সভা বসানো হয়েছিল। ক্ষমা চেয়ে সাদা কাগজে সই করতে বলা হয় তাঁদের দু’জনকে। এক সিভিক ভল্যান্টিয়ার সই করে দিলেও আবু রাজি হননি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এর পরেই আমায় বাইরে ডেকে নিয়ে গিয়ে ভুট্টু আর তার লোকজন ভোজালির কোপ মারে।’’ ভুট্টুর পাল্টা দাবি, ‘‘ওই সময়ে আমি এলাকাতেই ছিলাম না। ব্যবসার কাজে বহরমপুরে ছিলাম। তার প্রমাণও আছে।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেনের বক্তব্য, ‘‘গাড়ির চালকের ছেলেই হোক, বা ভুট্টুই হোক, বা অন্য কেউ হোক, কারওরই হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়া ঠিক নয়। দলীয় স্তরে নির্দেশ পেলে তদন্ত করা হবে।’’ জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার অবশ্য সালিশি সভার কথা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘থানা চত্বরে কখনও সালিশি সভা হয় না। ও দিনও হয়নি। এক জনকে ধরা হয়েছে, বাকিদেরও ধরা হবে।’’