Violence

গুলি-বোমার লড়াইয়ে মৃত্যু নিরীহের

রবিবার ভোর থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয়েছিল বোমার লড়াই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমকল শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২০ ০০:৫৯
Share:

সাজিবুলের শোকার্ত পরিবার। (ইনসেটে) সাজিবুল।  —নিজস্ব চিত্র।

লকডাউনের মধ্যেই ডোমকলে ফিরে এল বোমা-গুলির লড়াই। উত্তপ্ত হয়ে উঠল ডোমকল পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের জিতপুর নতুনপাড়া। তার মধ্যে পড়ে মৃত্যু হল সাজিবুল মণ্ডল (১৯) নামে এক যুবকের।

Advertisement

রবিবার ভোর থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয়েছিল বোমার লড়াই। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুনপাড়ার পাকা রাস্তা ধরে সেই সময়েই ইসলামপুর থানার সিতানগর গ্রামের বাড়ি থেকে ডোমকলের শম্ভুনগর এলাকার মাঠে পাটের জমিতে নিড়ানির জন্য আত্মীয়দের সঙ্গে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন সাজিবুল। দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তাঁর মাথায় লাগলে, ঘটনাস্থলেই মারা যান সাজিবুল। ডোমকলের পুরপ্রধান তৃণমূলের জাফিকুল ইসলাম বলছেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। যদি কোনও নেতা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন, তা হলে পুলিশ আইনানুগ ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, সেটাই আমরা আশা করছি। পুরানো ডোমকলকে আমরা আর দেখতে চাই না।"

প্রায় মাস খানেক থেকেই জিতপুর নতুনপাড়া এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল। দফায় দফায় বোমা পাওয়া গিয়েছিল এলাকার জঙ্গলে। দিন কুড়ি আগে খেলার সময় বাগানে বোমা ফেটে জখম হয়েছিল দুই কিশোরী। শুক্রবার থেকেই একেবারে সরাসরি সংঘাত শুরু হয়। তৃণমূল সূত্রেই খবর, এলাকায় শাসক দলের দাপুটে দুই নেতার অনুগামীদের এই লড়াই বহু পুরনো। শুক্রবার এই দুই পক্ষের গন্ডগোলের জেরে শনিবার মোজাম্মেল মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। আর সেই মৃত্যু নিয়ে আবারও তেতে ওঠে জিৎপুর নতুনপাড়া এলাকা।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে দাবি, শনিবার মোজাম্মেলের দেহ কবরস্থ হওয়ার পরে রবিবার ভোর থেকেই শুরু হয় দু’পক্ষের বোমা-গুলির লড়াই। ভোর পাঁচটা থেকে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ছিল সেখানে, চলছিল গুলিও। তার মধ্যে পড়ে যান সাজিবুল। সাজিবুলের কাকা কালু শেখের দাবি, ‘‘এক পক্ষ মোটরবাইকে চেপে পালিয়ে যাচ্ছিলেন, অন্য পক্ষ তাঁদের গুলি করতে করতে তাড়া করছিল। সেই সময় ভাইপো ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল চাষের কাজে। হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে তার মাথায়, আর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।’’ ওই যুবকের বোন সুফিয়া বিবি বলছেন, ‘‘পুলিশ প্রশাসন আগাম সতর্ক হলে এমন বেপরোয়া ঘটনা ঘটত না ওই এলাকায়। আমার ভাইয়ের খুনিদের কঠোর শাস্তি চাই।’’

মোজাম্মেলের খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে তিন জন। কিন্তু তারপরেও থেমে থাকেনি জিৎপুর নতুন পাড়া। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘চারটি আলাদা আলাদা পুলিশের দল তৈরি করা হয়েছে এই ঘটনাকে ঘিরে। যাদের নেতৃত্বে থাকবেন একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার। আমরা জোর তল্লাশি শুরু করেছি অভিযুক্তদের খোঁজে, তা ছাড়া বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জন্য আলাদা করে শুরু হয়েছে তল্লাশি।’’

তৃণমূলের যে দুই দাপুটে নেতার অনুগামীদের মধ্যে এই লড়াই বলে দাবি, তাঁদের কাউকেই এ দিন ফোনে পাওয়া যায়নি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মুর্শিদাবাদের সংসদ তৃণমূলের আবু তাহের খান অবশ্য বলছেন, ‘‘এই ঘটনায় দলের যে স্তরের নেতা জড়িয়ে থাকুন না কেন, অভিযোগ প্রমাণ হলে তাঁকে শাস্তি পেতেই হবে। কাউকে রেয়াত করা হবে না। আমরা দলীয় ভাবে এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি, আর প্রশাসনকে বলেছি কোনও রং না দেখে অভিযুক্তদের খুঁজে শাস্তির ব্যবস্থা করতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন