Political Clash

সভা-পাল্টা সভা, লড়াই চলছেই

জেলার দক্ষিণে উদ্বাস্তু ও মতুয়া ভোট বর্তমানে রাজনীতির অন্যতম নির্ণায়ক হয়ে উঠেছে। এই দুই বিষয়কে সমান গুরুত্ব দিতে চাইছে তৃণমূল ও বিজেপি।

Advertisement

সুদেব দাস, সৌমিত্র সিকদার

রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৪৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাজনৈতিক লড়াই আর শক্তিপ্রকাশের কেন্দ্র হিসাবে ক্রমশ উঠে আসছে রানাঘাট। সভা-পাল্টা সভার জন্য শাসক ও বিরোধী গোষ্ঠী জেলার মধ্যে এই শহরকেই বেছে নিচ্ছে।

Advertisement

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার ছয় দিনের মাথায় রানাঘাট ফ্রেন্ডস ক্লাবে পাল্টা সভা করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই সভার দু'দিন পরই ওই একই মাঠে আজ, সোমবার পাল্টা সভার ডাক দিয়েছে তৃণমূল। এ দিনের সভায় কুণাল ঘোষ, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়দের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শাসক ও বিরোধী দলের সভা, পাল্টা সভায় গরম হচ্ছে নদিয়া-দক্ষিণের রাজনৈতিক হাওয়া। রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, জেলার দক্ষিণ বিশেষ করে রানাঘাটকে শাসক-বিরোধী দুই শিবিরই পাখির চোখ করছে। তার কারণ, গত লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট কেন্দ্রটি শাসকদলের হাতছাড়া হয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনেও জেলার দক্ষিণের সব বিধানসভাতেই পদ্মফুল ফুটেছিল। পরে অবশ্য উপনির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপুর বিধানসভা জয়ী হয় তৃণমূল। তবে গত পুরসভা নির্বাচনে আশানরূপ ফল করতে পারেনি বিজেপি। তাই তৃণমূলের কাছে হারানো জমি পুনরুদ্ধার এবং পঞ্চায়েত ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ। অন্য দিকে, বিরোধী দল বিজেপির কাছে পঞ্চায়েত দখলের লড়াই জেলার রাজনীতিতে প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।

Advertisement

জেলার দক্ষিণে উদ্বাস্তু ও মতুয়া ভোট বর্তমানে রাজনীতির অন্যতম নির্ণায়ক হয়ে উঠেছে। এই দুই বিষয়কে সমান গুরুত্ব দিতে চাইছে তৃণমূল ও বিজেপি। তার প্রমাণও মিলেছে। গত ১৭ ডিসেম্বর রানাঘাট মিলন মন্দির মাঠে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্যের মধ্যে এনআরসি, সিএএ প্রসঙ্গ তুলে ধরেছিলেন। দাবি করেছেন, সিএএ নিয়ে মানুষকে বোকা বানাতে চাইছে বিজেপি।

গত ২৩ ডিসেম্বর রানাঘাটের সভামঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথাতেও উঠে এসেছে সিএএ এবং শ্রীচৈতন্যকে নিয়ে ভাবাবেগের প্রসঙ্গ। ৩১ ডিসেম্বর রানাঘাট উত্তর-পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা ধানতলায় সভা করার কথা বলে গিয়েছেন। ওইদিনের সভায় দলনেতা এনআরসি ও সিএএ বিষয়ের উপরে আলোকপাত করতে চান বলেও গত সভা থেকেই তিনি জানিয়ে গিয়েছেন।

শাসকবিরোধী রাজনৈতিক সভা, পাল্টা সভার মধ্যেই কার সভায় কত মানুষ উপস্থিত থাকছেন, তা-ও এখন জেলার রাজনীতিতে চর্চিত বিষয় হয়ে উঠেছে। শাসক-বিরোধী দুই শিবিরই একে অপরের বিরুদ্ধে বাইরে থেকে লোক এনে মাঠ ভরানোর অভিযোগ তুলছে। রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি যেখানে সভা করবে, সেখানে আমরাও পাল্টা সভা করব। ওরা বাইরে থেকে লোক এনেছিল। কিন্তু আমাদের তার প্রয়োজন নেই। রানাঘাটের দু’টি ব্লকের অধীনে থাকা গ্রামীণ এলাকা, সঙ্গে রানাঘাট ও কুপার্সের পুরসভার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতেই আমাদের সভা মাঠ ভরে যাবে।’’

আবার তৃণমূলকে কটাক্ষ করে নদিয়া দক্ষিণ সংগঠনিক জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক আশিস বরণ উকিল বলেন, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে এখন সাধারণ মানুষ নেই। একের পর এক প্রকল্পে দুর্নীতি, আবাস যোজনা, কাটমানির মতো বিষয়গুলি সামনে এসেছে। মানুষ হয়তো ওদের সভায় যাবেন কিন্তু তাঁরা ভোট আমাদেরই দেবেন।’’ অভিষেকের সভার জন্য ৪৫ দিন ধরে রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার বিভিন্ন জায়গায় দলের পক্ষ থেকে বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। সভার কয়েক দিন আগের থেকে বেসরকারি বাস বুকিং শুরু হয়ে গিয়েছিল। এ বার সভার চব্বিশ ঘণ্টা আগে সভার জন্য গুটিকয়েক বাস নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দলের এক কর্মীর কথায়, সবে একটা বড় সভা শেষ হয়েছে। সবাই সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করেছেন। তাই এখন খুব বেশি কর্মী নিয়ে কোনও সভায় যাওয়া বা ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। চাকদহ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা চাকদহ পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি দিলীকুমার সরকার বলেন, ‘‘আমাদের ব্লক থেকে মাত্র এক হাজার লোক নিয়ে যাইয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই ব্লকের দশটি অঞ্চলের প্রত্যেকটি থেকে একশো জন নিয়ে যেতে হবে। আমরা চাকদহ স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে রানাঘাট স্টেশনে যাব। সেখান থেকে হেঁটে সভায় যাওয়া রহবে। তাই বাস খুব একটা প্রয়োজন হবে না।’’

আর চাকদহের বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষ বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যের পর তৃণমূলের কোনও নেতার বক্তব্য কেউ শুনবে না। তাই চাকদহের কোথাও তৃণমূলের ওই সভা নিয়ে ওদের মধ্যে কোনও উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ওদের কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন