উচ্চ শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকা মেনে ভোট করার কথা ছিল ১৫ জানুয়ারি। কিন্তু কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ফল বার হয় চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে। এ দিকে ফল না বার হলে পড়ুয়াদের ভোটাধিকার থাকে না। প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়াদের বাদ দিয়ে ভোট করায় আপত্তি তোলে কলেজগুলি। আপত্তি জানায় ছাত্র সংগঠনগুলিও। ফলে চলতি শিক্ষাবর্ষে জেলার কোনও কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। এর ফলে কলেজ পরিচালনায় নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। খর্ব হচ্ছে ছাত্রদের অধিকার।
গত বছরেরে শেষের দিকে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতরের যুগ্ম সচিব এস বসুরায় এক নির্দেশিকা জারি করে জানান, রাজ্যের সব কলেজের ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ করতে হবে ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে। কিন্তু ফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন দুই জেলা- নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের ৪৪টি কলেজে চলতি শিক্ষাবর্ষে ছাত্র সংসদের ভোট হয়নি। জেলার কলেজগুলির কর্তৃপক্ষ ও ছাত্র-সংগঠনগুলির নেতাদের সঙ্গে দুই জেলার প্রশাসন গত বছরের শেষের দিকে ছাত্রভোট নিয়ে আলোচনায় বসে। কিন্তু দেখা যায়, প্রথম বর্ষের পরীক্ষা ২০১৪ সালের অগস্ট নাগাদ শেষ হলেও ফল বার হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই তখন চোখে পড়েনি। এমনকী, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেও বিশ্ববিদ্যালয় ফল বার করার ব্যাপারে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। এ দিকে ভোটগ্রহণের চূড়ান্ত সময়সীমাও অতিক্রম করার মুখে। ফল বার হলেই যে তড়িঘড়ি ভোট নেওয়া যায় তা-ও নয়। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, ভোটের দিনের অন্তত ১৪ দিন আগে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। তাই জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই পরিষ্কার হয়ে যায়, শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকা মেনে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে কলেজগুলি ভোট করাতে পারবে না। এ দিকে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের বাদ দিয়ে ভোট করাতে আপত্তি তোলে ছাত্র-সংগঠনগুলি।
এই অবস্থায় চলতি শিক্ষাবর্ষে ছাত্র সংসদের ভূমিকা কী হবে, কলেজের যে সমস্ত কমিটিতে ছাত্র প্রতিনিধি থাকেন, সেগুলি কীভাবে কাজ করবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
গত শিক্ষাবর্ষে নদিয়া জেলার সব ক’টি কলেজেরই ছাত্র সংসদ ছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কব্জায়। মুর্শিদাবাদ জেলারও অনেকগুলি কলেজের ছাত্র-সংসদের দখল নিয়েছিল টিএমসিপি। বিরোধী ছাত্র সংসগঠনগুলির প্রশ্ন, শাসকদলের ছাত্র-সংগঠনকে পুনরায় ক্ষমতাসীন করে রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফল দেরিতে বার করে ভোট হতে দিলেন না। এসএফআই-এর মুর্শিদাবাদ জেলার সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘বকলমে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনকে ছাত্র সংসদের ক্ষমতায় পুনরায় রাখার জন্য কলেজগুলিতে নির্বাচন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। নির্বাচন না হওয়ায় কলেজের পরিচালন সমিতিতেও কোনও ছাত্র প্রতিনিধি নেই। এটা কলেজের সাংবিধানিক রীতির বিরুদ্ধে। এর বিরুদ্ধে আমরা পথে নামব।’’ একই ভাবে ভোট না হওয়াকে সমালোচনা করে ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সুমন দাসের বক্তব্য, ‘‘সামনের মাস থেকে আমরা এর বিরুদ্ধে অধ্যক্ষদের কাছে প্রতিবাদ জানাব। বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পিতভাবে টিএমসিপি-কে সুবিধা পাইয়ে দিতেই এটা করল। ছাত্র সংসদের জন্য ছাত্রদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ আদায় করেছে কলেজগুলি। অথচ ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থাটুকুই করল না বিশ্ববিদ্যালয়।’’ পিএসইউ-এর রাজ্যের সহ সভাপতি আরাফত শেখ বলেন, ‘‘ছাত্রদের এই বঞ্চনার দায় রাজ্য সরকারকেই নিতে হবে। কারণ, ছাত্র সংসদ গঠিত না হওয়ায় কলেজের অনেক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে রয়েছে।’’
মুর্শিদাবাদ জেলার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অরিন্দম ঘোষ ভোট না হওয়ার জন্য পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ফল প্রকাশের ব্যাপারে গোড়ায় গলদ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের। ঠিক সময়ে ফল বার করলে ভোট হত। আমরা চাই প্রশাসন কলেজগুলিতে দ্রুত ভোট করার ব্যবস্থা নিক।’’
পদাধিকারবলে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য হতে হয়। যেহেতু চলতি শিক্ষাবর্ষে নির্বাচিত ছাত্র সংসদই নেই, সেখানে পরিচালন সমিতিতে ছাত্র প্রতিনিধি কে থাকবেন তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। বেলডাঙা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা সুজাতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিচালন সমিতিতে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রতিনিধিত্ব করে। এবারে নির্বাচন না হওয়ায় সে প্রতিনিধি নেই কলেজে। এ ব্যাপারে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও নির্দেশিকাও পাইনি। তবে ছাত্র সংসদের কাজগুলি করার জন্য সমস্ত সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গড়া হয়েছে।’’
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার প্রসেনজিৎ দেব বলেন, ‘‘কলেজ নির্বাচনের বিষয়টি আমি দেখি না। তাই কিছু বলতে পারব না।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইন্সপেক্টর অব কলেজ’ সুব্রতকুমার রায় জানান, রাজ্য সরকারের উচ্চ শিক্ষা দফতরের নির্দেশে এ বছর সমস্ত কলেজে নির্বাচন বন্ধ রয়েছে।