গোলমালের জেরে প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচনই ভেস্তে গেল দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে। পথ অবরোধ হল বার্নিয়ায়, হোগলবেড়িয়ায় কাঁদানে গ্যাস ছুড়ল পুলিশ। জনতার ছো়ড়া ইটে চার পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন।
সোমবার তেহট্ট মহকুমার বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে নতুন প্রধান নির্বাচন ছিল। করিমপুর ১ ব্লকের হোগলবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট ১৭ জন সদস্যের মধ্যে বিজেপির আট জন, তৃণমূলের ছ’জন, দুই নির্দল প্রার্থী এবং সিপিএমের এক জন নির্বাচিত হয়েছেন। দুপুরে সকলে পঞ্চায়েত অফিসে পৌঁছনোর পরেই ভোটাভুটি শুরু হয়। বিজেপি সদস্য সুজিত মণ্ডলের নাম প্রধান হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছিল।
ভোটের পরে দেখা যায়, বিজেপি ১০-৬ ভোটে জিতেছে। তৃণমূলের এক সদস্য ভুল ভোট দেওয়ায় তা বাতিল হয়ে গিয়েছিল। তা নিয়েই গোলমালের সূত্রপাত। তৃণমূলের লোকেরা প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে দাবি করতে থাকেন, ওই ভোট বাতিল করা যাবে না। দু’পক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। বিজেপির অভিযোগ, ওই সময়েই তৃণমূলের সদস্যেরা কাগজপত্র ছিঁড়ে হইচই শুরু করে দেয়। সুজিতের অভিযোগ, ‘‘ওই সময়ে পুলিশ তালা ভেঙে পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকে আমাদের সদস্যদের মারধর করে। সকলেই কমবেশি আহত হন।”
করিমপুর ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি তরুণ সাহা অবশ্য পাল্টা বলেন, “প্রধান নির্বাচনের সময়ে আমাদের কোনও কর্মী পঞ্চায়েত অফিসের ধারে-কাছেও ঘেঁষেননি। অফিসের ভিতরে আমাদের সাত সদস্যের মধ্যে ছ’জন মহিলা ছিলেন। তাঁরা কোনও গন্ডগোল করেননি।” করিমপুর ১-এর বিডিও সুরজিৎ ঘোষ জানান, ব্যালট বাতিল নিয়ে সদস্যদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার কারণে নির্বাচন প্রক্রিয়া এ দিনের মতো স্থগিত হয়ে গিয়েছে। জেলাশাসককে জানানো হয়েছে।
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত অফিস থেকে গোলমালের আওয়াজ শুনে পুলিশ গিয়েছিল। এ দিকে ভিতরে ঝামেলার কথা শুনে বাইরে লোকজন উত্তেজিত হয়ে ওঠে। কেউ-কেউ ইট ছুড়তে শুরু করে। পুলিশ লাঠি চালিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়। পাঁচ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসও ছোড়ে। যদিও রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হননি।
সদস্যদের মধ্যে গোলমালে ভেস্তে গিয়েছে তেহট্ট ২ ব্লকের বার্নিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচনও। এই পঞ্চায়েতে মোট ১৯টি আসনের মধ্যে তৃণমূল আট, কংগ্রেস দুই, সিপিএম পাঁচ ও বিজেপি চারটি আসন পায়। কিন্তু মাসখানেক আগে সেখানে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি সদস্যরা তৃণমূলে যোগ দেন।
এ দিন তৃণমূল সদস্যদের এক পক্ষ প্রধান হিসাবে রুনা লায়লাকে দাঁড় করাতে চায়। অপর পক্ষ মিনতি ঘোষ চৌধুরীর পাশে দাঁড়ায়। তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্য অনুকূল সরকারের দাবি, ১০ জন সদস্য রুনা লায়লাকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎই প্রক্রিয়া প্রশাসনের আধিকারিকেরা চলে যান। তার প্রতিবাদে বেলা ১২টা থেকে পঞ্চায়েতের ঘরে ধর্নায় বসেন ১০ জন পঞ্চায়েত সদস্য। বার্নিয়া বাজারেও রুনার জন্য অবরোধ শুরু করেন তৃণমূলের সমর্থকরা। বিকেলে অবরোধ উঠলেও পঞ্চায়েত অফিসে রাত পর্যন্ত অবস্থান-বিক্ষোভ চলেছে।
তেহট্ট ২-এর বিডিও অভিজিৎ চৌধুরী জানান, ওখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ থাকায় প্রধান নির্বাচন সম্পন্ন করা যায়নি। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘ওখানে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও কেন প্রধান নির্বাচন সম্পন্ন হল না, খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’