শিশুবদলে নির্বিকার নার্সিংহোম

শোনডাঙার পার্বতী গড়াইয়ের পরিবারকে বলেছিলেন, ‘এই দেখুন ছেলে হয়েছে মিষ্টি খাওয়াবেন!’ খানিক পরে ঢাকাপাড়া-নাদুরিয়াপাড়ার হিমি মণ্ডলের কপালে বাঁজ ফেলে দাঁড়িয়ে থাকা পরিবারের লোকজনকে বলেন, ‘‘এই দেখুন কি মিষ্টি মেয়ে খুশি তো!’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৫৫
Share:

সাত সকালে হাসি ছড়িয়ে ছিল দু’বাড়ির লোকজনের মুখে। বেলা বাড়তেই সেই মুখেই জমল ঘন মেঘ!

Advertisement

ছেলে না মেয়ে, ঘরে এল কে? নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের দায়সারা কাজের জেরে দু’বাড়ির লোকের সামনে দুলতে তাকল সন্দেহ, আর তার জেরেই দিনভর অশান্তি জিইয়ে রইল কৃষ্ণনগরের এক নার্সিংহোমে।

দু’বাড়ির লোকই ধন্দে পড়ে স্থানীয় থানায় শিশু বদলের অভিযোগ ঠুকেছেন ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

Advertisement

শহরের গা ঘেঁষা ভাতজংলার ওই নার্সিংহোমে রবিবার বিকেলে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল দুই প্রসূতির। ওটি থেকে বেরিয়ে, থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে থাকা পরিবারের লোকজনকে চিকিৎসক জানিয়ে গিয়েছিলেন ‘চিন্তার কিছু নেই, মেয়ে হয়েছে’। কিছুক্ষণের ব্যবধান, অন্য পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়ে ছিলেন ‘আপনাদের ছেলে হয়েছে’ বলে। কোলে করে নবজাতককে বাইরে এনে এক ঝলক দেখিয়েও গিয়েছিলেন নার্স। শোনডাঙার পার্বতী গড়াইয়ের পরিবারকে বলেছিলেন, ‘এই দেখুন ছেলে হয়েছে মিষ্টি খাওয়াবেন!’ খানিক পরে ঢাকাপাড়া-নাদুরিয়াপাড়ার হিমি মণ্ডলের কপালে বাঁজ ফেলে দাঁড়িয়ে থাকা পরিবারের লোকজনকে বলেন, ‘‘এই দেখুন কি মিষ্টি মেয়ে খুশি তো!’

তবে, আধ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ বদলে ফেলেছিল বয়ান। দায়সারা জবাবে এ বার জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘ছেলে নয় আপনাদের মেয়ে আর ওঁদের মেয়ে নয় ছেলে!’ এতো দ্রুত ‘শিশু বদল’ হয়ে যাওয়ায় দু পক্ষই হইচই শুরু করে দেন। ছড়ায় উত্তেজনা। এর পরেই শিশু বদলের অভিযোগ তুলে পুলিশে নালিশ করেন পরিবার দু’টি।

নার্সিংহোমের ম্যানেজার দিব্যেন্দু পাল বলেন, “এটা নিছকই ভুল। অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই আমাদের।’’

পার্বতীদেবীর পরিবারের দাবি, ‘‘শুধু ছেলে দেখানো নয়, আমাদের সইও করিয়ে নেওয়া হয়েছিল। আর হিমিদেবীর পরিবারের লোকজন বলছেন, ‘‘কী বলব বলুন তো, দেখিয়ে গেল মেয়ে তার পর মিষ্টি খাওয়ানোর আবদার, এমনকী সই সাবুদও করিয়ে নিয়ে গেল!’’

নতুন সদস্য আসায় দুই পরিবারই মেতে উঠেছিল আনন্দে, পরস্পরকে মিষ্টি খাওয়ানো থেকে শুরু করে নার্সদের বখশিস দেওয়া সাবেক নিয়ম মেনে হয়েছিল সে সবও।

তবে ঘোরটা ভেঙে যায় কিছুক্ষণ পরে। কারণ ঘণ্টা খানেক পরে একেবারে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে যান নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। দু’পক্ষকেই ডেকে প্রথমে বোঝাতে শুরু করে তারা —একটা ভুল হয়ে গিয়েছে আমাদের। আসলে গড়াই পরিবারের শিশুটিকে আমরা মণ্ডল পরিবারকে দেখিয়ে ফেলেছি। নির্বিকার গলায় নিজেদের দোষ স্বীকার করে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ হাত ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করে ছিল বটে কিন্তু বেঁকে বসে পরিবার দু’টি।

প্রথমে খেপে ওঠেন পার্বতীদেবীর পরিবার। তারা চিৎকার জুড়ে দেন, তার পর সটান থানায় গিয়ে নালিশ ঠুকে দেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

পার্বতীদেবীর স্বামী বাবন বলেন, “ছেলে না মেয়ে, সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু আমরা কি করে বলব যে নার্সিংহোম দ্বিতীয়বার সঠিক কথা বলছে!’’ তাদের দাবি, ডিএনএ পরীক্ষা করে কে কার সন্তান নির্ধারণ হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন