নালিশ জানাব স্যার কী করে, অভিযুক্ত যে পুলিশ

হুমড়ি খাওয়া ভিড় থেকে হাতটা ফাঁক গলে শেষতক উঠেই গেল।—স্যার, একটা কথা বলব?

Advertisement

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৩৮
Share:

পুলিশ সুপারের ক্লাস। —নিজস্ব চিত্র

হুমড়ি খাওয়া ভিড় থেকে হাতটা ফাঁক গলে শেষতক উঠেই গেল।

Advertisement

—স্যার, একটা কথা বলব?

খাঁকি উর্দির বদলে ছিমছাম সাদা জামার পুলিশ কর্তার নিশ্চয়তা মিলতেই মেয়েটির কাঁপা গলা বুঝি ভরসা পেল— ‘‘এখানে অনেক ভাল ভাল কথা শুনলাম স্যার। কিন্তু থানায় গেলে পুলিশ আমাদের কথা শুনবে তো!’’

Advertisement

যে মিঠে হাসিটা এতক্ষণ ছড়িয়ে ছিল পুলিশ সুপারের ঠোঁটে তাতে কী ভাঁজ পড়ল ঈষৎ, ভরসা একটা দিলেন বটে, তবে তাতে তেমন দম কোথায়। পুরনো হাসিটা ফিরে আসার আগেই উড়ে এল আরও একটা পাটকেল। এ বার কলেজের অধ্যাপিকা। বলছেন, ‘‘মেয়েটি কলেজে আসাই বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ জানতে বাড়ি গিয়েছিলাম। শুনলাম, বাড়ির বাইরে পা রাখলেই তার দিকে উড়ে আসে উড়ন্ত চুমু, সাইকেল ধরে টানাটানানিও বাদ পড়ে না।’’ একটু দম নেওয়ার জন্য থেমেছিলেন বোধহয়। সুপার সাহেব খেই ধরিয়ে দেন, ‘‘কেন পুলিশ তো আছে, জানিয়েছেন?’’ অধ্যাপিকা এ বার যে হাসিটা তুলে আনছেন ঠোঁটে সেটা নিপুণ শ্লেষ— ‘‘জানাবে কী করে স্যার, ওই ছাত্রীকে যে দিবারাত্র উত্যক্ত করছে সে যে পুলিশ কর্মী।’’

সুর কি কেটে গেল একটু?

পুলিশ কর্তা হেসে ফেলেন, ‘‘না না তা কেন, বলুন না যাঁর যা অভিযোগ আছে।’’ আজ, তিনি অভিযোগ শুনতেই এসেছেন যে।

বুধবার, এমনই অহরহ ইট-পাটকেল উড়ে এল ‘আলোর পথে’, মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের দিকে।

অপরাধ জগতের হাতছানি থেকে কী ভাবে বাঁচাবে নিজেকে— ছাত্রীদের সে কথাই শোনাতে এসেছিলেন তিনি। আর, বহরমপুর গালর্স কলেজে সেই ক্লাস ‘আলোর পথে’ থেকে তিনি ফিরলেন পুলিশের বিরুদ্ধে হাজারো অনুযোগ শুনে।সচেতনতার সে অনুষ্ঠানের নাম হোক না আলোর পথে, ক্লাস ভর্তি ছাত্রীকুল কি সে আলোর খোঁজ পেলেন? এক ছাত্রী তো বলেই বসলেন, ‘‘এখানে খুব পজিটিভ আলোচনা হল ঠিকই, দেখবেন স্যার, থানায় গেলে সেই ব্যবহারটা যেন পাই।’’

একটু ঠোঁটকাটা শোনাচ্ছে কি, সামাল দিতে গিয়েছিলেন দু’এক জন পুলিশ কর্তা। মুকেশ বলেন, ‘‘তা কেন, ওঁদের বলতে দিন না। আমাদের সবাই তো ধোয়া তুলসিপাতা নন!’’ আর, তাই কোনও অসুবিধা হলে সটান তাঁকে মেসেজ বা হোয়াটসঅ্যাপ করার জন্য তুলে দিলেন নিজের নম্বরও (৯৫৬৪১০০১০০)। বলছেন, ‘‘থানায় অসুবিধা হলে উপর মহলে জানাবেন। ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। দরকারে মহিলা থানার ওসি ময়ূরী ঘোষকে ফোন করবেন। তার পরে আমি তো আছিই।’’ ক্লাস উপচানো ভিড়টা সে কথা শুনল বটে, ভরসা পেল তো!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement