বিয়ের সতেরো বছর পরেও সন্তান হয়নি। সেই ‘অপরাধে’ এক তরুণীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ উঠল তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার সকালে কান্দি থানা এলাকার ছাতিনাকান্দি দিঘির পারে ঘটনাটি ঘটে। তরুণীর নাম শচীমাতা মণ্ডল। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কান্দি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শচীমাতা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে তাঁর বাবা হরিমাখন ঘোষ জামাই রতন মণ্ডল, তাঁর দাদা মানিক মণ্ডল ও বৌদি মানসী মণ্ডলের বিরুদ্ধে কান্দি থানায় খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও শ্বশুরবাড়ির লোকজন সকলে পালিয়েছে। রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে ছাতিনাকান্দি এলাকার গ্যারাজ ব্যবসায়ী রতন মণ্ডলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল শচীমাতার। বিয়েতে আসবাবপত্রের সঙ্গে প্রায় আট ভরি সোনার গয়না দেওয়া হয়েছিল বলে তরুণীর বাড়ির লোকজন পুলিশের কাছে দাবি করেছেন। অশান্তি শুরু হয় দম্পতির সন্তান না হয়া নিয়ে।
শচীমাতার বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, বিয়ের পরে সতেরো বছর পেরোলেও সন্তান না হওয়ায় ভাসুর ও জা তাঁকে নিয়মিত গালিগালাজ করত। এমনকী, প্রায়ই মারধরও করা হত। ভাসুর-জায়ের এ হেন আচরণের কথা শচীমাতা স্বামীকে জানাতেন। কিন্তু তাঁর পাশে দাঁড়ানোর বদলে স্বামী রতনও দাদা-বৌদির পক্ষ নিয়েই কথা বলতেন বলে অভিযোগ।
তরুণীর বাবার অভিযোগ, এই টানা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছয় সপ্তাহ দুয়েক আগে। শ্বশুরবাড়ির লোক বেধড়ক মারধর করায় সে বাড়ি ছেড়ে কান্দির রসড়ায় বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন শচীমাতা। গত বুধবার রতন সেখানে গিয়ে জানায়, আর তাঁর উপরে কোনও নির্যাতন বা মারধর হবে না। তার আশ্বাসে মেয়েকে ছেড়ে দেন হরিমাখনেরা। স্ত্রীকে নিয়ে রতন বাড়ি ফিরে যায়।
কিন্তু এর পরেও অত্যাচার বন্ধ হয়নি। হরিমাখনের অভিযোগ, ভাসুর আর জা নির্যাতন চালিয়েই যাচ্ছিল। এ দিন সকালে বাড়িতেই শচীমাতার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পাড়া-পড়শি এসে তাঁকে উদ্ধার করে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। হরিমাখন বলেন, “সন্তান নেই বলে প্রায়ই কুরুচিকর মন্তব্য করত শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিন্তু এ ভাবে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করবে, ভাবতে পারিনি। তা হলে আর মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠাতাম না। পড়শিরা হাসপাতালে নিয়ে না গেলে মেয়েটা ঘরের মধ্যেই মরে পড়ে থাকত।”
তবে পাড়া-পড়শিদের একাংশের দাবি, শচীমাতা নিজেই গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশ জানায়, সম্ভব হলে শচীমাতার বয়ানও নেওয়া হবে।