সরকারি রং পড়ে গিয়েছে— নীল সাদা ডুরে। খুঁত নেই তাতে। কিন্তু রং দিয়ে কি ফাটল বন্ধ করা যায়! ফাঁক-ফোঁকর পলেস্তরা খসা চেহারাটা ধরা পড়ে যাচ্ছে, বৃষ্টিতে সে রং সামান্য ধুয়ে গেলেই। সেতুর মুখে জ্বলজ্বল করছে— বিপজ্জনক আসতে চালান গাড়ি। রড-সিমেন্টের তৈরি এই কম্পোজিট সেতুর রংটুকু বাদ দিলে, চেহারায় মালুম হচ্ছে— আর যেন ভার নিতে পারছে না সে।
ইসলামপুরের সুখদেবমাটি সেতুর এটাই সার কথা। কলকাতার মাঝের হাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে পূর্ত দফতরের টনক নড়েছে। পরিদর্শনের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। তবে ওই টুকুই। মেরামতির প্রশ্ন শিকেয় তুলে পূর্ত কর্তারা জানিয়ে গিয়েছেন, ওই সেতুর পাশেই নতুন একটি সেতু করার কথা ভাবছেন তাঁরা। তা হলে কি এই সেতুটি ব্যবহারযোগ্য নয়? তার অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি।
পূর্ত দফতরের কার্যনির্বাহী বাস্তকার অদ্রীশ চৌধুরী বলছেন, ‘‘নতুন একটা সেতু তৈরির প্রস্তাব দিয়েছি আমরা। পর্যবেক্ষণ হয়ে গিয়েছে। মাটি পরীক্ষার কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব নতুন সেতু তৈরির কাজ শুরু হবে।’’ তবে, সুখদেবমাটির সেই সেতুর উপর দিয়েই রমরমিয়ে চলেছে বাস-ট্রেকার এমনকী বিশ-ত্রিশ টন মাল বোঝাই লরিও। কারও পিঠে পাথরের চাঁই তো কারও কয়লা।
পূর্ত দফতরের হিসেব বলছে, প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে, শেয়ালমারি নদীর বুকে তৈরি হয়েছিল সুখদেবমাটির সেতু। এক দিকে বহরমপুরের ইসলামপুর অন্য দিকে রানিনগর, শেখপাড়া, সাগরপাড়া। এই দুই জনপদের মাঝে ৪৮মিটারের এই পুরোনো সেতুই ভরসা। ওই পথে গড়ে শ‘দেড়েক বাস চলাচল করে।। দিন কয়েক আগে, বহরমপুর ডিভিশন-২’র পূর্ত কর্তারা সেতু পরিদর্শনে আসেন। জানান, সুখদেবমাটির সেতু বিপদসংকুল এবং সেই জন্য নতুন একটি সেতু তৈরি করা প্রয়োজন। সেতুর পারাপারের সময় গাড়ির গতি (৫ কিমি/ঘন্টা) নির্দিষ্ট থাকলেও অনেকেই যে তা মানছেন না, বলাই বাহুল্য। এ ছাড়াও পাটের সময় বেশির ভাগ মানুষ ভেজা পাট শুকোতে দেয় সেতুর রেলিঙে। ফলে সেখানেও পচনের ইঙ্গিত। মরচে ধরে গিয়েছে তাতে। গার্ড রেল বলেও কিছু নেই। স্থানীয় বাসিন্দা কিরণ সরকার বলছেন, ‘‘নিচ দিয়ে গেলে মনে হয় এই বুঝি ধসে পড়বে।’’