Coronavirus

দু’দিনেই উঠে গেল ‘কোয়রান্টিন’ কেন্দ্র

শনিবার, সেই সেন্টার চালু হওয়ার পরে কেরল-মহারাষ্ট্র-দিল্লি ফেরত ২৪৭ জন পরিযায়ী শ্রমিককে ১৪ দিনের জন্য কোয়রান্টিনে রাখাও হয়েছিৃল।

Advertisement

জীবন সরকার

ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২০ ০৪:১০
Share:

এই স্কুলেই তৈরি হয়েছিল কোয়রান্টিন কেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র

করোনাভাইরাস সতর্কতায় ভিন রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের জন্য ধুলিয়ানের কাঞ্চনতলা হাইস্কুল ঢেলে সাজিয়ে দিন কয়েক আগেই গড়ে তোলা হয়েছিল কোয়রান্টিন সেন্টার। ধুলিয়ান পুর-কর্তৃপক্ষ স্বস্তি ভরা গলায় জানিয়েছিলেন, ‘যাক ঘরে ফেরা শ্রমিকদের আর দূরের সেন্টারে যেতে হবে না!’

Advertisement

শনিবার, সেই সেন্টার চালু হওয়ার পরে কেরল-মহারাষ্ট্র-দিল্লি ফেরত ২৪৭ জন পরিযায়ী শ্রমিককে ১৪ দিনের জন্য কোয়রান্টিনে রাখাও হয়েছিৃল। কিন্তু দু’দিন যেতে না যেতেই তাদের অভব্যতায় উঠে গেল সেই কোয়রান্টিন সেন্টার। সরিয়ে নিয়ে যেতে হল কোয়রান্টিনে থাকা শ্রমিকদের সকলকেই।

অভিযোগ, পরিযায়ী ওই শ্রমিকদের ‘মদ্যপানের’ দাবি না মানায় ওই কোয়রান্টিন সেন্টারের টেবিল-চেয়ার ছুড়ে ফেলে, পাখা ভাঙচুর করে রীতিমতো তাণ্ডব চালায় তারা। স্কুল প্রায় তছনছ করে দেওয়ায় বাধ্য হয়েই পুলিশ আসে। কিন্তু তাতেও তাদের তাণ্ডব থামানো যায়নি। বাধ্য হয়ে সেই ‘গুন্ডামি’র কাছে মাথা নোয়াতে হয় পুলিশকে। তাদের দাবি মেনে ২৪৭ জনকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয় গ্রামের বাড়িতে। সেখানে পরিবারের লোকজনকে ঘরে ফেরা শ্রমিকদের উপরে ‘নজরদারির’ দায়িত্ব দিয়েই ফিরে আসে পুরকর্তৃপক্ষ।

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এর ফলে ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের কেউ করোনাভাইরাসের ক্যারিয়ার হলে তার উপরে নজরদারির আর কোনও উপায় থাকল না। রোগ যদি কারও শরীরে থাকে তবে তা ছড়াতে সময় লাগবে না। ব্যাপারটা দুশ্চিন্তায় রাখল।’’ তবে, শমসেরগঞ্জের বিএমওএইচ তারিক হোসেন বলেন, ‘‘স্কুলের মধ্যে কোয়রান্টিন সেন্টার চালু করে পুর-কর্তৃপক্ষ ঠিক করেনি। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে পুরসভা এ ব্যাপারে কোনও কথা বলেনি। তাই পুরসভা কেন এমন একটা কোয়রান্টিন সেন্টার খুলল, কেনই বা তড়িঘড়ি তুলে দিল তা বলতে পারব না।’’ শমসেরগঞ্জের বিডিও জয়দীপ চক্রবর্তীও এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সরকারি ভাবে আমাকে কেউ কোয়রান্টিন সেন্টার খোলার কথা জানাননি। সেখানে কাদের রাখা হয়েছিল, কেনই বা তুলে দিতে হল তা-ও বলতে পারব না।’’

খবরটা জেলা প্রশাসনের কানে গিয়েছে। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘খবরটা শুনেছি। কিন্তু কাউকে না জানিয়ে এ ভাবে কোয়রান্টিন সেন্টার খোলা হল কেন, সেটাই দেখার।’’ এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

তবে, ওই কোয়রান্টিন সেন্টার খোলার মূল উদ্যোক্তা ধুলিয়ান পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের সুবল সাহা তাঁর অসহায়তার কথা আড়াল করেননি। তিনি বলেন, ‘‘ওই কোয়রান্টিন সেন্টারে শ্রমিকদের আচরণ অত্যন্ত আপত্তিকর হয়ে গিয়েছিল। দিন-রাত মারামারি করত। মদ ও গাঁজার আসর বসাত বলেও শোনা যাচ্ছে। স্কুলের সম্পত্তিও নষ্ট করছিল। বাধ্য হয়ে কোয়রান্টিন সেন্টার তুলে দিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন