ছানার দাম পড়েছে এক লাফে। গরুর খাবারের দামই উঠছে না অনেকের। নিজস্ব চিত্র
গোয়ালে আটটি গরু। সেগুলোর মোট ৪০ কেজি দুধের উপর নির্ভর করে দিন গুজরান কান্দির খড়সার উত্তম ঘোষের পরিবারের। উত্তমের দাবি, ৪০ কেজি দুধ থেকে মাত্র দশ কেজি ছানা তৈরি হয়। বর্তমানে ওই দশ কেজি ছানার বাজারে দাম মাত্র চারশো থেকে পাঁচশো টাকা। কিন্তু আটটি গরুর সারা দিনের খাবার যেমন, খড়, খোল, খুদের ভাত সব মিলিয়ে খরচ প্রায় এক হাজার টাকা। উত্তম বলেন, “চার জনের পরিবার। সঙ্গে রয়েছে ছোট নাতি। কী করে চালাব, জানি না।” বাড়ির উঠোনে ঘি তৈরি করতে করতে উত্তমের স্ত্রী সেন্টুবালা ঘোষ বলেন, “আলু সিদ্ধ, ভাত আর ঘি-ই ভরসা।”
মার্চের পরপর দু’সপ্তাহ ছানা ও চাঁচির বাজার উঠেছিল প্রায় দু’শো টাকা কেজি। কিন্তু আচমকা সেই বাজারে ভাটা পড়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি কান্দি ছানা ও চাঁচির বাজার থেকে প্রায় ১৪ টন চাঁচি ও ১৬ টন ছানা কলকাতা, শিলিগুড়ি, বর্ধমান, আসানশোল, সিউড়ি, দুবরাজপুর-সহ একাধিক এলাকায় যায়। কিন্তু লকডাউনে সব বন্ধ। তাই দুধ দিয়ে বাড়িতে খরচ করে ছানা ও চাঁচি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করাতে গিয়ে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কিন্তু লকডাউনে স্থানীয় ক্রেতাও তো আসছেন না।
ছানা ব্যবসায়ী গোপীনাথ ঘোষ, অশোক ঘোষরা জানান, তাঁদের ৬০টি থেকে ১০০টি করে গরু আছে। সেই সমস্ত দুধ, ছানার সঙ্গে অন্যদের আনা ছানাও তাঁরা বিক্রি করেন। কিন্তু সমস্ত বাজার বন্ধ। বর্তমানে ছানা বিক্রি করে যে টাকা হচ্ছে তাতে গরুর খাবারের ব্যবস্থা হচ্ছে না।
তাঁদের দাবি, ‘‘কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে।’’ কান্দি বাজার থেকে কলকাতাতে দৈনিক প্রায় ১০ টন চাঁচি যায়। এক সপ্তাহ থেকে সেটা বন্ধ হয়েছে। ফলে ওই চাঁচি ব্যবসা বন্ধ করতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
চাঁচি ব্যবসায়ীরা টন টন চাঁচি কলকাতার হিমঘরে মজুত করে রেখেছেন বলে জানান চাঁচি ব্যবসায়ী সুজিত ঘোষ, সমীর ঘোষরা। তাঁরা বলেন, “কান্দিতে দৈনিক প্রায় ১৪ টন চাঁচি তৈরি হয়। এতো চাঁচি কান্দিতে হিমঘরে রাখার ব্যবস্থা নেই। কলকাতায় চলে যায়।” ওই চাঁচি হিমঘরে তিন মাস ঠিক থাকবে। কিন্তু হিমঘরে রাখা ছানা মাত্র চার দিন ঠিক থাকবে বলেও দাবি ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ী সুজিত বলেন, “মিষ্টির ব্যবসা সবই বন্ধ। ফলে ছানা ও চাঁচি থাকলেও মজুর করা যাবে না। কারণ এতো ছানা চাঁচি মজুত করলে নষ্ট হয়ে যাবে। বাধ্য হয়েই তাই আমাদের অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।”
কান্দির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক উজ্জ্বল চন্দ্র বলেন, “চাঁচি ঠান্ডাতে থাকলে কিছু দিন ঠিক থাকে, কিন্তু ছানার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই হিমঘরে ছানা যাতে মজুত না করা হয়, সেটা দেখতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরেও যাতে হিমঘরে মজুত করা ছানা বার করে মিষ্টি তৈরি হয়, তা হলে ডায়েরিয়া হতে পারে।”