Coronavirus

হোয়াট্সঅ্যাপেই ফর্দ ছুটছে মুদিখানায়

সোমবার লকডাউনের আগে পাড়া ও বেপাড়ার মানুষের ভিড় উপছে পড়েছিল তাঁর দোকানে।

Advertisement

বিদ্যুৎ মৈত্র

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ০৩:৩৯
Share:

মুদির দোকানে ফর্দ মিলিয়ে জিনিস গোছাচ্ছেন সোমনাথ। নিজস্ব চিত্র

‘দু’টো কারি-কাট একটা চিকেন লিভার’— রান্নাঘর থেকে যে ফোনটা এ যাবত উড়ে যেত দোকানে আর মিনিট দশেকের মধ্যেই দরজায় কড়া নেড়ে পৌঁছে যেত ফর্দ মেলানো আমিষ-নিরামিষ, বড় শহরের সেই ফোন-ফরমায়েশের সুযোগ এখন খুলে দিচ্ছে নিতান্ত মফসসলের আটপৌরে মুদিখানা। গলির মুখে ‘মা তারা ভাণ্ডার’ থেকে ‘মিনা স্টোর্স’— সাবেক দোকানি হোয়াটস অ্যাপের গ্রুপ খুলে ক্রেতাদের দল গড়ে চেয়েচ্ছেন ফর্দ। তার পর অনুরোধ করছেন, এক সঙ্গে নয়, নির্দিষ্ট সময়ে এসে জিনিস নিয়ে যেতে। সুযোগ থাকলে কাছাকাছির বাড়িতে নিজেই পৌঁছে দিচ্ছেন ফর্দ মেলানো মুদি-সামগ্রী। করোনার ত্রাসে ভিড় এড়িয়ে শহুরে হোম ডেলিভারির হাততালি কুড়োচ্ছেন নিতান্ত নিরীহ মুদি দোকানিও।

Advertisement

বহরমপুরের খাগড়া এলাকার আচার্য পাড়ার এক ফালি মুদি দোকানি সোমনাথ চন্দ্র তাঁদেরই এক জন। সোমবার লকডাউনের আগে পাড়া ও বেপাড়ার মানুষের ভিড় উপছে পড়েছিল তাঁর দোকানে। বলছেন, ‘‘বারবার অনুরোধ করেছি, এত দুঃশ্চিন্তা করবেন না, দোকান তো খোলাই থাকল, মালপত্র সময় করে এসে নিয়ে যাবেন। কিন্তু লোকে শুনলে তো!’’ তাই এ বার ক্রেতাদের নম্বর নিয়ে খুলে ফেলেছেন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ। তার পর সেখানেই দিতে বলেছেন ফর্দ। জিনিস গুছিয়ে পাল্টা বার্তা পাঠিয়ে জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘রেডি, নিয়ে যান!’ সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন মানানসই ইমোজি!

সোমনাথ বলেন, ‘‘চিন্তায় পড়ে গিয়েছি। টিভি- সংবাদমাধ্যমে বারবার বলা হচ্ছে, এই সময় ভিড় বাঁচিয়ে চলুন। নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রাখুন। কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে মানুষজন কথা না শুনে চলে আসছেন দোকানে। কী ভয়ানক বিপদ বলুন তো, তাই এই উপায় বের করেছি।’’সোমনাথ জানান, দোকানে ধার বাকিতে জিনিস কেনার ফলে খদ্দেরদের ফোন নম্বর লেখা ছিল খাতায়। সেই নম্বর ধরেই একের পর এক খদ্দেরকে গ্রুপে যোগ করে নেন। আর তার সঙ্গে গোটা দশেক নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেন ওই গ্রুপে। যেখানে লেখা আছে— প্রয়োজনীয় জিনিস ফোনে জানান, দোকানে এসে জানানোর প্রয়োজন নেই। তবে দিনে এক বারের বেশি নয়। ‘মাল’ রেডি হয়ে গেলে ফোনে জানানো হবে। আসতে পারলে দোকানে এসে নিয়ে যাবেন তবে একাধিক ব্যক্তি আসবেন না। শিশুরাতো নৈব নৈব চ। একান্ত আসতে না-পারলে জানাবেন। বাড়ি গিয়ে পৌছে দেওয়া হবে।

Advertisement

মঙ্গলবার সকাল থেকেই হাতে নাতে ফল পেতে শুরু করেছেন সোমনাথ। স্থানীয় শিক্ষক শতাব্দী সরকার বলছেন, “গত ছয় বছর ধরে সোমনাথের দোকানে জিনিস নিচ্ছি। এই রকম ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যখন বাড়ির বাইরে বেড়নো বারণ, তখন ওঁর ভাবনা দেখে তাজ্জব হয়ে গেছি।” বাবলু বসাক বলছেন, “ছেলেটার মাথায় এমন বুদ্ধি খেলে গেল বলে আমরাও বেঁচে গেলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন