প্রতীকী ছবি
আঁটোসাঁটো ব্যবস্থার ফাঁক গলেই পরীক্ষার ধারে কাছ দিয়ে না গিয়েই ওঁদের কেউ ফিরে গেলেন নিজের গ্রামে, কেউ বা রাত কাটাতে বেছে নিলেন বহরমপুরের হোটেল।
জনতা কার্ফুর মাঝেই, রবিবার মুম্বই, কেরল থেকে সাত সকালে বহরমপুর নামেন জনা তিরিশ পরিযায়ী শ্রমিক। কেউ সোনার কাজ করেন কেউ বা হোটেলে। কেরলে কেউ বা নির্মাণ শ্রমিক কেউ মুম্বইয়ের জরির দোকানে ব্যস্ত শিল্পী। করোনা আতঙ্কে তাঁরা দেশে ফিরলেন বটে কিন্তু এ দিন মোহনা বাসস্ট্যান্ডে নেমে কোনও স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই তাঁরা নিজের গ্রামে ফিরে গেলেন। হাওড়া স্টেশনে মুম্বই থেকে ফিরেছেন রাহুল শেখ, ফারুক হোসেন, মসকুর শেখ, সোনালি খাতুনেরা। সেখান থেকেই দক্ষিণবঙ্গ পরিবহন সংস্থার বাসে বহরমপুরে নামেন তাঁরা। হাওড়া স্টেশনে কারও শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়েছে কারও সেটুকুও হয়নি, জানিয়ে নবগ্রাম থানার লক্ষণপুরের বাসিন্দা রাহুল শেখ বলেন, “কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ি ফিরে এলাম। কিন্তু তা বলে পরীক্ষা করাতে হবে কেন, আমাদের তো কোনও অসুবিধা নেই!’’ রাহুল, ফারুক-সহ নবগ্রামের জনা কুড়ি যুবকের এমনই অনড় দাবি। মুম্বইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন তাঁরা। দৈনিক মজুরিতে মুম্বইয়ে রয়েছেন বছর ছয়েক ধরে। ফারুক বলেন, “ওখানে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টাকা পাব না। খাবারও পাব না। তাই বসে না থেকে তৎকালে ট্রেনের টিকিট কেটে চলে এলাম।” পাঁচ গ্রামের বাসিন্দা মসকুর বলেন, “করোনা আতঙ্ক নিয়ে বিদেশ বিঁভুইয়ে থাকার চেয়ে নিজের গ্রামে থাকা নিশ্চিন্তের।” নুর নবি সদ্য ফারুকদের সঙ্গে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে মুম্বই গিয়েছিল। বাবা সুখটান শেখ পরের জমিতে চাষ করেন। কষ্টের সংসারে একটু হাসি ফেরাতেই মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন নুর। করোনা আতঙ্কের পাশাপাশি কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর এক চিন্তায় পড়েছেন সবে আঠার পার করা ওই তরুণ। তিনি বলেন “দু’পয়সা রোজগার করতে গিয়েছিলাম অত দূরে। ভাইরাস আক্রমণ থেকে সতর্ক থাকতে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই চলে আসতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু আগামি দিনে সংসার চালাব কি করে এখন সেটাই সবচেয়ে বড় চিন্তা।”
কিন্তু করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা না করিয়েই গ্রামে ফিরলেন, সংক্রমণ ছড়াতে পারে তো? শুনে তাজ্জব বনে গেলেন ওই সদ্য যুবক। বলছেন, ‘‘এ সব কথা তো আমাদের কেউ বলেনি।’’ তাঁদের সঙ্গেই বাড়ি ফিরছেন বীরভূমের ১০ জন, উত্তর দিনাজপুর লাগোয়া বিহারের কিসানগঞ্জের জনা সাতেক যুবকও। তাঁদেরই একজন জুলফিকার আলি ভুট্ট বলেন, “কেরালার হোটেলে কাজ করি। এখান থেকে মালদা যাব। সেখান থেকে কিসানগঞ্জ। কোনও অসুখ নেই পরীক্ষা করাব কেন!’’
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘কে কখন কোথা থেকে আসছেন, তা কি সব সময় নজর রাখা সম্ভব! ফলে আশঙ্কা তো থাকছেই।’’