Clay artists

Clay Artist: করোনায় বন্ধ বিদেশের দোর, বিষণ্ণ ঘূর্ণী

এলাকার কাজ, মাঝে-মধ্যে রাজ্যের বাইরের দু’একটা কাজের উপর ভরসা করেই তো কারখানা খুলে রেখেছি।

Advertisement

সুদীপ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২১ ০৮:০০
Share:

সুনসান কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণী। নিজস্ব চিত্র

লকডাউনের আগে বিশ্বের নানা দেশে পাড়ি দিত গৌতম পালের গড়া গাঁধীমূর্তি। শুধু ২০১৯ থেকে পরের বছর লকডাউন শুরু ইস্তক আটটি মূর্তি গিয়েছিল।

Advertisement

তার পর থেকেই ঘূর্ণীর শিল্পীদের গড়া মূর্তির বিদেশে রফতানি কার্যত পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

কথায় আছে, ‘ঘূর্ণীর মাটির পুতুল জগদ্বিখ্যাত’। এখন অবশ্য বড় মূর্তির ক্ষেত্রে ফাইবার বা ব্রোঞ্জের মূর্তিরই চল বেশি। গৌতম জানান, বিভিন্ন দেশে তাঁর তৈরি গাঁধী ও রবীন্দ্রনাথের মিলিয়ে ব্রোঞ্জের তৈরি কমবেশি ১২০টি মূর্তি আছে। লকডাউন শুরুর ঠিক আগে তাঁর তৈরি একটি গাঁধীমূর্তি জর্জিয়ায় যায়। করোনার কারণে এত দিন পরে সদ্য তার উদ্বোধন হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।

Advertisement

গৌতমের মতো হাল অনেকেরই। বিদেশের মূর্তির বরাত নেই। স্থানীয় কিছু কাজের ভরসাতেই শিল্পীদের চলছে। ঘূর্ণী শিবতলায় রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী সুবীর পালের কারখানায় গিয়ে দেখা গেল, ছোট্ট মাটির মণ্ড নিয়ে মুখমণ্ডলের রূপদান করছেন। ব্যস্ত কি না জানতে চাইতে হেসে বললেন, “এখন হাতে অখণ্ড সময়। এলাকার কাজ, মাঝে-মধ্যে রাজ্যের বাইরের দু’একটা কাজের উপর ভরসা করেই তো কারখানা খুলে রেখেছি। বিদেশের কাজ তো দু’বছরে একটাও হল না।”

সুবীর জানান, ২০১৯ নভেম্বরে আমেরিকার শিকাগো কালীবাড়ির জন্য দশটি নানা দেবদেবীর ফাইবারের মূর্তির বরাত পেয়েছিলেন যেগুলি পরের বছর এপ্রিলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মার্চের শেষে শুরু হওয়া লকডাউনে আটকে যায়। অক্টোবরে পরিস্থিতি খানিক স্বাভাবিক হতে বিমানের বদলে জাহাজে পাঠালেন। সাত দিনের জায়গায় লাগল প্রায় চার মাস। ’২০ সালের শেষ দিকে পশ্চিম জার্মানির এক মিউজিয়ামের জন্য বিভিন্ন দেশের মানুষের আদলে ৩০টি মডেল গড়ার ব্যপারে যোগাযোগ হয়। কিন্তু পরিস্থিতি আবার ঘোরালো হয়ে ওঠায় সেই কথাবার্তাও থমকে যায়। আর এক শিল্পী মৃগাঙ্ক পালের কথায়, “বিদেশে বা অন্য রাজ্যে মূর্তি গিয়েছে সবই লকডাউনের আগে। এর মধ্যে আর কিছু যায়নি।”

স্থানীয় কাজও বিশেষ নেই। স্কুল-কলেজ, নানা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ মনীষী বা দেবদেবীর মূর্তির বরাত নেই। আগে প্রতি শনি-রবিবার বাইরে থেকে প্রচুর মানুষ ঘূর্ণী বেড়াতে আসতেন। মায়াপুর বা বেথুয়াডহরি বেড়াতে আসা লোকজনও ঘুরে যেতেন। অনেক বিদেশিও আসতেন। পর্যটকেরা মাটির পুতুল কেনাকাটা করতেন। সেই ভিড়ও এখন উধাও।

রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত আর এক শিল্পী তড়িৎ পাল বলেন, “আগে দশ জন বেড়াতে এলে দু’জন কিছু না কিছু কিনতেন, এখন সারা দিন দোকান খুলে রাখলেও দু’এক জনের দেখা পাওয়া ভার।” ২০১৯ সালে তাঁর গড়া একটি ছোট দুর্গাপ্রতিমা বিদেশ পাড়ি দিয়েছিল। সেই শেষ।

এই কঠিন সময়ের মধ্যেও অবশ্য ঘূর্ণীর সুদীপ্ত পালের গড়া তিনটি ছোট দুর্গা প্রতিমা এ বার অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে। গত বছরেও তাঁর তৈরি দু’টি দুর্গা প্রতিমা আমেরিকা গিয়েছে। তবে দুর্গা বাদে অন্য মডেলের বরাত পাননি।

সুদীপ্ত বলেন, “এখন কোভিড বিধি মেনে বিদেশে মূর্তি পাঠানোর খরচও আগের চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে। মূর্তি গড়ার খরচও বেড়েছে অনেকটা। কিন্তু আর্থিক চাপে সকলেই, ফলে কেউ বেশি দাম দিতে চাইছেন না।”

কবে আবার সাগরপারের দোর খুলবে, সেই দিকেই চেয়ে ঘূর্ণী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন