চলছে চিকিৎসা। নিজস্ব চিত্র
মেরেকেটে দু’কিলোমিটার দূরে মহকুমা হাসপাতাল। ফলে আনুখা পঞ্চায়েতের খান দশেক গ্রামের বাসিন্দারা সামান্য জ্বরজারি হলেও কান্দি মহকুমা হাসপাতালে পা বাড়াতেন। নিশ্চল পড়ে থাকত গ্রামীণ হাসপাতাল।
অথচ মহকুমা হাসপাতালে রোগীর চাপ কমাতে বহড়া গ্রামে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তৈরি হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। শুরুতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সর্বক্ষণের জন্য চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী থাকত। এখন চিকিৎসক প্রায় থাকেনই না। নিয়মরক্ষার চিকিৎসা করতেন ফার্মাসিস্ট। গ্রামের লোকের কথায়, ‘‘হাফ ডাক্তারের হাসপাতাল!’’
কান্দি ব্লকের যশোহরি-আনুখা ১ পঞ্চায়েতে বহড়ায় ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে বহড়া, লাহারপাড়া, শান্তিপাড়া, মুনিগ্রাম, বানুপাড়া, রাতুনি, কয়েম্বা, ঘোষবাটীর মতো খানদশেক গ্রাম ভরসা করতেন। কিন্তু চিকিৎসকের অভাবে ক্রমে ঝিমিয়ে পড়ে হাসপাতাল। শুধু, সকাল থেকে দুপুর— এই ছিল বহিঃবিভাগের সময়। ফলে জ্বর, পা ভাঙা, প্রসবযন্ত্রণায় বহড়ার মানুষকে ছুটতে হত কান্দি মহকুমা হাসপাতাল। তবু, প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়মিত অন্তত ২০০ রোগী যান। মাঝেমধ্যে চিকিৎসক না থাকলেও রয়েছেন একজন নার্স, ফার্মাসিস্ট এবং এক সাফাইকর্মী। বছরখানেক ধরে হাসপাতালে সপ্তাহে তিন দিন চিকিৎসক যেতেন। পরে একজন স্থায়ী চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়। তিনি কয়েক মাস কাজ করে ইস্তফা দিয়ে চলে যান। তারপর থেকে চিকিৎসকহীন হয়ে পড়ে হাসপাতাল। ভরসা শুধু ফার্মাসিস্ট। তবু, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে সেই নিভু নিভু স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখন সরগরম। কারণ আর কিছুই নয়, করোনার ছায়ায় সেই প্রায় বাতিল হাসপাতাল এখন চিকিৎসক নার্সে পরিপূর্ণ। নিয়ম করে সপ্তাহে তিন দিন চিকিৎসক আসছেন হাসপাতালে। কান্দি ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এই পরিস্থিতিতে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে রোগীর চাপ কমাতে গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতেও চিকিৎসক পাঠানো হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা রাধানাথ দাস, চন্দন ঘোষ বলেন, “করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে কান্দি যেতে চাইছেন না কেউ। গ্রামের বাইরে যাতায়াত করাও সমস্যা। তাই সবাই এই গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভিড় করছে।’’স্থানীয় আশাকর্মীরা নিয়মিত এলাকার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখছেন বলে দাবি করে কান্দি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক উজ্জ্বল চন্দ্র বলেন, “চিকিৎসকের অভাব আছে। তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে একটি কেন্দ্রে চিকিৎসক নেই। কিন্তু করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক যাতে এলাকার মানুষের উপর প্রভাব না পড়ে সে দিকে লক্ষ্য রেখে ব্লক হাসপাতাল থেকে সপ্তাহে তিন দিন করে বহড়া হাসপাতালে চিকিৎসক পাঠানো হচ্ছে।” এমনকি গোকর্ণ গ্রামীণ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দু’জন চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়েছে। যাতে কোন ভাবেই রোগীর ভিড় হাসপাতালে না থাকে সে দিকে নজর দিয়ে ওই ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান উজ্জ্বল। বড়ঞা গ্রামের বাসিন্দা তথা কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সুকান্ত ত্রিবেদী বলেন, “আমি বহুবার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলির প্রাণ ফেরানোর দাবি জানিয়েছি। তাতে মানুষ নিজের এলাকায় যদি চিকিৎসার সুবিধা পান তা হলে দূরের হাসপাতালে যাবে না। তাতে বড় হাসপাতাল গুলিতে চিকিৎসা আরও উন্নত হবে।’’
অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।