Coronavirus

ধান কিনতে না পারলেই চালকল বন্ধ

নদিয়ার চালকল ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, জেলায় দু’ধরনের চালকল রয়েছে— ‘মিনি হাস্কিং রাইস মিল’ এবং ‘অটোম্যাটিক রাইস মিল’।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২০ ০২:৫৮
Share:

প্রতীকী ছবি

লকডাউনের জেরে টান পড়তে চালের বাজারে বাজারে। এখনই ততটা বোঝা না গেলেও লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে এপ্রিলের শেষ দিক থেকে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা চালকল মালিকদের।

Advertisement

নদিয়ার চালকল ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, জেলায় দু’ধরনের চালকল রয়েছে— ‘মিনি হাস্কিং রাইস মিল’ এবং ‘অটোম্যাটিক রাইস মিল’। দ্বিতীয় ধরনের চালকলে ধান থেকে চাল উৎপন্ন হওয়ার সবটাই স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় হয়। বড় শিল্পের আওতাভুক্ত ওই চালকল জেলায় আছে ন’টি। তবে সেই সব কলে উৎপন্ন চাল খোলা বাজারে সরাসরি আসে না, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে সরবরাহ করা হয়।

অন্য দিকে, জেলার বাজারগুলিতে চালের জোগান প্রধানত আসে ‘মিনি হাস্কিং রাইস মিল’। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের আওতাভুক্ত ওই চালকলের সংখ্যা জেলায় আটশোর কিছু বেশি। শান্তিপুর, চাকদহ, বাদকুল্লা, স্বরূপগঞ্জ, আয়েশপুর প্রভৃতি অঞ্চলেই ছড়িয়ে রয়েছে বেশির ভাগ চালকল। এক-একটি মিলে দৈনিক গড়ে ৪০ থেকে ১৫০ বস্তা করে চাল উৎপন্ন হয়। কিন্তু এই মুহূর্তে প্রায় সব ক’টি হাস্কিং মিলে ধান এবং চালের মজুত প্রায় শূন্য।

Advertisement

চালকল মালিক তথা ‘চাকদহ থানা ধান ও চাউল ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি মহাদেব সাহা বলেন, “আমাদের দুটো সিজ়ন। এই এপ্রিলের শেষ থেকে শুরু হয় ধান কেনার প্রধান মরসুম, চলবে জুন পর্যন্ত। সেই হিসাবে এখন আমাদের বছর শেষের হিসেব-নিকেশ চুকিয়ে দেওয়ার সময়। ক’দিন পরেই নতুন ধান মজুত করা হবে। সেই জন্য প্রতি বছর এই সময়ে আমাদের মজুত শূন্য হয়ে যায়। কিন্তু এ বার যা অবস্থা, আমরা যদি ধান কিনতে না পারি, বাজারে জোগানে সমস্যা দেখা দিতে পারে।”

ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এপ্রিলের শেষ নাগাদ তাঁরা বর্ধমান, মেদিনীপুর, হুগলি, মুর্শিদাবাদ থেকে এক বছরের জন্য ধান কেনা শুরু করেন। লকডাউনে ধান কেনার সেই প্রক্রিয়া যদি ব্যাহত হয়, তা হলে মজুত চাল ফুরিয়ে গেলেই বিপদ। মহাদেব সাহা বলেন, “আমরা যাতে অন্য বারের মতো ধান কিনতে পারি, সরকারকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে, প্রতি বছর সরকার যে সহায়ক মূল্য বেঁধে দেয়, সেটা নিয়েও এ বার ভাবনা চিন্তা করলে ভাল হয়। ”

নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের যুগ্ম সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, “চালকল ছাড়া এই জেলায় আছে সয়াবিনের কারখানা। তাদের এখনও পর্যন্ত সমস্যা নেই। বিভিন্ন শহরে স্থানীয় ভাবে চলা তেলকল বা আটা কলে সরষে বা গমের জোগান এখনও পর্যন্ত ঠিকই আছে। রাজ্য সরকার গম দেওয়া শুরু করায় আটা কলগুলি স্বাভাবিক ভাবেই উৎপাদন করছে।”

যেমন করিমপুরে যে সমস্ত ছোট ধানকল, গমকল বা তেলের ঘানি রয়েছে, তার বেশির ভাগই উৎপাদন করছে। এক মিল মালিক জানান, এলাকার অনেক চাষি আছেন, যাঁদের বাড়িতে নিজের জমিতে উৎপন্ন সরষে বা ধান-গম রয়েছে। তাঁরা অনেকেই সে সব পেষাই করার জন্য মিলে আনছেন। আবার রেশনে পাওয়া গম নিয়েও অনেকে আটা করতে মিলে আসছেন। তাদের জিনিস মাপার পরে ঠিকানা ও ফোন নম্বর নিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলা হচ্ছে। মিলে কাউকে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। পরে আটা বা তেল তৈরি হয়ে গেলে তাঁদের ডেকে তা দেওয়া হচ্ছে।

দোকানপাট ও যান চলাচল বন্ধ থাকায় পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। করিমপুরে উৎপাদিত কলা বা পানের মত কৃষিজ পণ্য মূলত রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা ও ভিন্ রাজ্যে পাঠানো হয়। এখন সে সব পণ্য কেনা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাষিরা আতান্তরে পড়েছেন। কলা ব্যবসায়ী সুধীরঞ্জন সমাদ্দার জানান, এলাকার কয়েক হাজার চাষি কলা চাষের উপর নির্ভরশীল। তাঁদের উৎপাদিত কলা ট্রাক বোঝাই হয়ে বিহার, ঝাড়খণ্ড ও রাজ্যের নানা জেলায় যায়। শুধু মাত্র করিমপুর এলাকা থেকেই প্রতি দিন কুড়ি ট্রাক কলা ভিন্ রাজ্যে যায়। কিন্তু নানা হাটে কেনাবেচা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চাষিদের জমির কলা গাছেই পেকে যাচ্ছে।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন