মারিয়ার বাড়ি মরিয়মের নামে, তবুও চুপ প্রশাসন

অভিযোগ উঠেছে, সরকারি দফতরে এ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়তেই মিটমাট করে দেওয়ার নাম করে ‘অবৈধ’ উপভোক্তাদের কাছে তোলা আদায় শুরু করেছেন এক শ্রেণির গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য।

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮ ০১:৫৮
Share:

উপভোক্তা তালিকায় নাম আছে উতেরা বেওয়ার। তাঁর বদলে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন উতেরা বিবি। একই ভাবে জামিলা বেওয়ার বদলে জামিলা বিবি ও মারিয়া বেওয়ার বদলে মরিয়ম বেওয়াকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি দেওয়া হয়েছে। ওই রকম নামের ফেরে মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা ব্লক এলাকায় এ রকম অনেকে দুঃস্থই প্রকৃত উপভোক্তা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন‌।

Advertisement

অভিযোগও জমা পড়েছে লালগোলা ব্লকের বিডিও এবং লালবাগ মহকুমা শাসকের কাছে। লালবাগ মহকুমাশাসক তোপদেন লামা বলেন, ‘‘অভিযোগের দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে লালগোলার বিডিও-কে।’’ অন্য দিকে অভিযোগ উঠেছে, সরকারি দফতরে এ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়তেই মিটমাট করে দেওয়ার নাম করে ‘অবৈধ’ উপভোক্তাদের কাছে তোলা আদায় শুরু করেছেন এক শ্রেণির গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য।

উতেরা বেওয়ার বাড়ি লালগোলা ব্লকের ময়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সিঙা গ্রামের ২২ নম্বর গ্রাম সংসদে। বাসিন্দা তালাকপ্রাপ্ত উতেরা বেওয়া তাঁর ১২ বছরের মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকেন। তাঁর বাবা বাদশা শেখ পেশায় রাজমিস্ত্রি। উতেরা তাঁর মেয়েকে নিয়ে থাকেন বাবার দেওয়া ছোট্ট একটি মাটির বাড়িতে। তাঁর নামে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি করে দেওয়ার জন্য সরকরি ভাবে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু বাড়ি তৈরির সেই টাকা তাঁর বরাতে জোটে না। উতেরা বেওয়া বলেন, ‘‘ওই গ্রামেরই ২৩ নম্বর গ্রাম সংসদের ভোটার, পেশায় রাজমিস্ত্রি আনসার আলির স্ত্রী উতেরা বিবির নাম নেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি করে দেওয়ার তালিকায়। তবুও ২২ নম্বর গ্রাম সংসদের ভোটার আমাকে বঞ্চিত করে আমার নামে বরাদ্দ টাকা দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিডিও এবং মহকুমাশাসককে অভিযোগ করা হয়েছে।’’

Advertisement

কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে আর্থিক ও সামাজিক সমীক্ষা করা হয়। সেই সমীক্ষা অনুসারে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার উপভোক্তদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকায় উপভোক্তার নির্দিষ্ট ক্রমিক নম্বর-সহ যাবতীয় পরিচয় নথিবদ্ধ থাকে। কম্পিউটারে নথিবদ্ধ থাকা ওই তালিকা অনুসারে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উপভোক্তাদের বাড়ি করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রাম সংসদের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য আবেদনপত্র মঞ্জুর করেন। তার পর উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকউন্টে ৩ কিস্তিতে মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বিডিও অফিস থেকে জমা করা হয়।

এ বিষয়ে ২২ নম্বর গ্রাম সংসদের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের আবুল কালাম বলেন, ‘‘ওই ভুলের জন্য দাবি ২৩ নম্বর গ্রাম সংসদের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য টিঙ্কু হালদার। পরে এই বিষয়ে সরকারি বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ জমা পড়ায় বিডিও-র নির্দেশ মতো কয়েক দিনের মধ্যে সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে ওই অবৈধ কাজের সংশোধন করা হবে।’’

গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের টিঙ্কু হালদার বলেন, ‘‘ওই ভুলের জন্য আমি দায়ি নই। আমি ৪০ হাজার চাকা নিয়েছি বলে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেটিও মিথ্যা কথা। তবে উতরা বিবির আবেদনপত্র আমি মঞ্চু করেছি। সরকরি দফতর সেই আবেদনপত্র বাতিল করা হলে ওই ভুল ঘটত না। ওই ভুলের দ্রুত সংশোধন করা হবে বলে বিডিও অফিসের কর্তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।’’

একই ভাবে বঞ্চিত হয়েছেন বলে সরকারি দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন লালগোলার জোতখামার গ্রামের জামিলা বেওয়া ও সাহাবাদ গ্রামের মারিয়া বেওয়া-সহ অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন