আদালতে কুমারেশ। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় ধৃত কুমারেশ চক্রবর্তীকে তিন দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল রানাঘাট আদালত। শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করার পরে শনিবার তাঁকে রানাঘাট আদালতে হাজির করানো হয়। তবে ন’জন অভিযুক্ত এখনও ফেরার।
আদালতের পথে কুমারেশ অবশ্য শান্তিপুরের পুরপ্রধান অজয় দে-র দিকেই আঙুল তুলেছেন। তাঁর দাবি, “বিনা কারণে আমায় ধরেছে পুলিশ। পুরপ্রধানের গয়না যাতে খুলে নিতে না-পারি সে জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে তিনি আমায় জড়িয়েছেন। আমিই আসল তৃণমূল। অজয় দে তো কংগ্রস থেকে এসেছেন। তৃণমূল তৈরির সময়ে আমি এই শান্তিপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে ছিলাম।”
জুয়ার ঠেকে অজয়-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কর্মী শান্তনু মাহাতো ওরফে গনা খুন হওয়ার পরে এখানে তৃণমূলের অন্দরে পুরপ্রধান বনাম বিধায়ক কোন্দল ফের সামনে চলে এসেছে। কুমারেশ-সহ ১১ জন অভিযুক্তই বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। খোদ অরিন্দমের নামেও খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে। কুমারেশের কথা প্রসঙ্গে অজয় পাল্টা বলেন, “চক্রান্তের অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা। আমি প্রথম থেকেই বলে এসেছি, পুলিশ পুলিশের কাজ করুক, আইন আইনের পথে চলুক। যারা নিজেরা সারা দিন চক্রান্ত করে, তারাই এ সব কথা বলে।”
এই খুনের মামলায় এখনও পর্যন্ত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দু’দিন আগে অভিযুক্ত এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করতে গয়েশপুরে গিয়ে বাধা পেতে হয় পুলিশকে। খালি হাতে ফেরে তারা। কুমারেশ ছাড়া ধরা পড়েছে সন্তু চৌধুরী নামে আর এক জন। দু’জনকেই পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। তাঁদের ফের জেরা করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু বিধায়ক হাতের নাগালে থাকলেও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করেনি পুলিশ। শুক্রবার কুমারেশের সঙ্গে দেখা করতে তিনি শান্তিপুর থানায় গেলেও এই মামলা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা হয়নি। অরিন্দম অবশ্য বলেন, “আমি তদন্তে সব রকম ভাবে সহযোগিতা করতে রাজি আছি। তবে যখন তদন্ত চলছে, সেই সময়ে এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।”
বিধায়ককে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করছে না পুলিশ? তৃণমূলের তরফে কি চাপ দেওয়া হচ্ছে? দলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর সিংহ এ দিন বলেন, “আমরা যদি চাপই দিতাম, তা হলে কুমারেশকেও পুলিশের ধরার কথা নয়। খুনের মতো বিষয়কে আমাদের দল প্রশ্রয় দেয় না। পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবেই তদন্ত করছে। তারা মনে করলে বিধায়কের সঙ্গেও কথা বলবে।” রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার ভিএসআর অনন্তনাগও বলেন, “কেউ কোনও চাপ দেয়নি। স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত চলছে। সেই কারণেই দু’জন গ্রেফতার হয়েছে।”