সারা রাত যেন পাড় ভাঙে পদ্মা

শীতের রাত। শব্দও যেন ঢাকা পড়েছে কুয়াশার চাদরে। তবে কান পাতলে, পদ্মাপাড়ের কলা বাগানে যেন পাড় ভাঙছে। ঝপাং, কী যেন তলিয়ে গেল জলে। হাঁটু ভেঙে কুঁজো হয়ে বিএসএফ যখন পৌঁছল গরুর লেজ ধরে ‘তেনারা’ তখন পদ্মায় ভেসে পড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২৪
Share:

শীতের রাত। শব্দও যেন ঢাকা পড়েছে কুয়াশার চাদরে। তবে কান পাতলে, পদ্মাপাড়ের কলা বাগানে যেন পাড় ভাঙছে। ঝপাং, কী যেন তলিয়ে গেল জলে। হাঁটু ভেঙে কুঁজো হয়ে বিএসএফ যখন পৌঁছল গরুর লেজ ধরে ‘তেনারা’ তখন পদ্মায় ভেসে পড়েছে। বরফ-কাটা জলে অনায়াসে গরুর পাল নিয়ে পাচারের সেই চেনা পদ্ধতিতে ছেদ পড়েনি এখনও।

Advertisement

নদী পাড়ে কাঁটাতার নেই। পাড় থেকে খানিক এগোলেই বুক সমান কলাইয়ের খেত। তার মাঝেই এক চিলতে পথে গরুর মুখে জাবদা (জালের মতো, বাঁধা থাকলে গরু ডেকে উঠতে পারে না) এঁটে অনায়াস পাচার চলছে। বিএসএফের এক কর্তা বলছেন, ‘‘কুয়াশা এমন একটা সমস্যা যে কোনও আধুনিক প্রযুক্তিতে তাকে সামাল দেওয়া য়ায় না। হাত কয়েক দূরের জিনিসও ঠাওর হয় না। তার উপর জমিতে বুক সমান উঁচু ফসল।’’

গরু পাচারের ‘আদর্শ’ সময় শীত আর ভরা বর্ষা। শীতের কুয়াশা বর্ষায় ভরা পাটের খেত, তার আড়ালে পাচারের ঢের সুবিধা। সীমান্তে তাই ১০০ মিটারের মধ্যে পাট চাষ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাতেও গরু পাচার রুখে দেওয়া গেছে এমন দাবি করতে পারছে না বিএসএফ। রানিনগরের এক পরিচিত পাচারকারী জানাচ্ছে, ‘‘বছর ১৫ আগেও শীতের মরসুমে এলাকার নদীগুলিতে জল থাকত। ঘন কুয়াশার মধ্যে নৌকা করে খুব সহজেই পদ্মা পার হওয়া যেত। এখন পদ্মায় জল হারিয়েছে তবে, পাচার বন্ধ হয়নি। সে তার মতোই চলছে!

Advertisement

নদিয়ার শিকারপুরের এক বড় ‘হোল্ডার’ (এলাকায় পাচারকারীদের চালু নাম) হাসতে হাসতে ছুড়ে দিচ্ছে চ্যালেঞ্জ, ‘‘যতই পাহারা বাড়ুক, কুয়াশা-পাট যত দিন আছে জেনে রাখুন গরু পাচারও চলবে তত দিন!’’

তবে, মেঠো পথে গরু পাচারের খোঁজ এখনও মেলে মাঠে অগুনতি গরুর খুরের দাগ দেখে। সকালে টহলদারি বিএসএফ সেই দাগ দেখে এলাকায় টহল বাড়ায়। দাগ মুছতে এখন রাতারাতি মই ঠেলে খুরের দাগ মুছে দেওয়া হচ্ছে। নদিয়ার হোগলবেড়িয়া বা মুরুটিয়া সীমান্তের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, রাতের আঁধারে কাঁটা তারের বেড়া কেটে গরু পাচারের ঘটনা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। ও পথ গাঁজা কিংবা কাশির সিরাপ পাচারের জন্যই ব্যবহার করা হয়। প্যাকেট বোঝাই কাশির সিরাপ কিংবা মাদক তারকাঁটার উপর দিয়ে ও পারে ছুড়ে দেওয়া অনেক সহজ। গরু পাচারের জন্য কুয়াশাই ভরসা।

বিএসএফ অবশ্য দাবি করেছে, দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি দিয়ে গরু পাচারে রাশ টানা গিয়েছে। সে হিসেব উল্টে যাচ্ছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডসের পরিসংখ্যানে। তাদের দাবি, এ বছরেই ৮.২১ লক্ষ গরু সে দেশে ঢুকেছে। আর মাদক পাচার হয়েছে ১১০৫ কোটি টাকার। পাচারের সুতোয় গ্রেফতার করা হয়েছে ২০৭২ জনকে।

তথ্য: সুজাউদ্দিন, বিমান হাজরা, কল্লোল প্রামাণিক, সুস্মিত হালদার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন