Coronavirus Lockdown

উড়ল চাল, চৌকির নীচেই বাকি রাত

বুধবারের অভিশপ্ত রাত কেড়ে নিয়েছে মাথার উপরের ছাদটুকু।

Advertisement

সম্রাট চন্দ

শান্তিপুর শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০৩:০৮
Share:

বাড়িঘর ভেঙে পড়ায় খোলা আকাশের নীচে ঠাঁই। —নিজস্ব চিত্র

রাতটা কোনও মতে কাটিয়েছেন ওঁরা। ঝড়ের বেগ যত বাড়ছিল, একে একে খসে পড়েছে ইট। এর পর হঠাৎই একটা দমকা হাওয়ায় উড়ে যায় টিনের চাল। উপায় না দেখে চৌকির তলায় আশ্রয় নেন দু’জন।

Advertisement

‘‘বৃষ্টির জলে তখন মেঝে থইথই। তার মধ্যেই চৌকির তলায় মাথা গুঁজে কোনও মতে রাতটুকু কাটালাম।’’

বৃহস্পতিবার সকালে নিজের বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে যখন আগের রাতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন প্রবীণ বলরাম দাস, তখনও তাঁর চোখে-মুখে স্পষ্ট আতঙ্ক। বুধবারের অভিশপ্ত রাত কেড়ে নিয়েছে মাথার উপরের ছাদটুকু। এখন করোনার মধ্যে মাথা গুঁজবেন কোথায়, সেই চিন্তায় ঘুম উড়েছে দাস দম্পতির।

Advertisement

শান্তিপুর ব্লকের ফুলিয়া টাউনশিপ পঞ্চায়েতের কৃষিপল্লি এলাকায় একচিলতে ঘরে বাস দাস পরিবারেরর। গৃহকর্তা বলরাম দাস স্থানীয় একটি হোটেলে কাজ করতেন। কোনও মতে চলে সংসার। ছেলে পেশায় ভ্যানচালক। লকডাউন শুরুর আগেই স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি কল্যাণীতে গিয়েছিলেন। আটকে পড়েছেন সেখানে। লকডাউনের এই সময়ে কাজ বন্ধ বলরামবাবুর। ঘরে এখনও সে ভাবে প্লাস্টারের ছাপ পড়েনি। খাবার জোটাতেই এখন হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। এর মধ্যে বুধবার রাতের ঝড়ে বিপদ বাড়ল তাঁদের।

এ দিন রাতে ঝড়ের সময়ে দু’জনেই ঘরে ছিলেন। সঙ্গে শুরু হয় বৃষ্টিও। নড়বড়ে ঘরে তখনই প্রমাদ গুনছিলেন তাঁরা। কিছু ক্ষণ পরে টুকরো টুকরো ইট খসে পড়তে থাকে। উড়ে যায় টিনের চাল। মাথা বাঁচানোর জন্য চৌকির তলায় আশ্রয় নেন মঞ্জুদেবী এবং বলরামবাবু।

তখন দু’জনের মনেই আতঙ্ক। মেঝে জলে ভর্তি। এক সময়ে ঝড়ের দাপট কমে। আলো ফোটার পরে বাইরে এসে দেখতে পান উঠোনে গাছের গায়ে পড়ে আছে টিনটা। মঞ্জুদেবী বলেন, ‘‘এরকম ঝড় আগে কখনও দেখিনি। রাতটা যে কী ভাবে কাটিয়েছি জলের মধ্যে মাথা নিচু করে বসে! শুধু ভাবছি, এবার ঘরটাই না ভেঙে পড়ে।।’’

ফুলিয়া টাউনশিপ পঞ্চায়েতের প্রধান উৎপল বসাক বলেন, ‘‘প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। যেখানে বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে তাঁদের ত্রিপল এবং ত্রাণ সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

বুধবার রাতের ঝড়ে অবশ্য শুধু দাস দম্পতিই নন, শান্তিপুর ব্লকের বেশ কিছু জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক বাড়ি। দুর্গতদের ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শান্তিপুরের বিডিও সুমন দেবনাথ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন