ঘূর্ণিঝড় উস্কে দিল টর্নেডো-স্মৃতি  

সেটা ছিল ১৯৯৩ সালের ৯ই এপ্রিলের দুপুর। সেই টর্নেডো খোশবাসপুর, গোকর্ণ, চাতরা এলাকার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল। ফণী আসার কথা শুনে আমার মতোই গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল।

Advertisement

সৈয়দ আনোয়ার আলম

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৯ ০২:৪৯
Share:

সে এক ভয়ঙ্কর দুপুর! বাড়ির বারান্দায় বসেছিলাম। আচমকা গ্রামের লোকজন ‘হাতি নামছে হাতি নামছে’ বলে ছোটাছুটি শুরু করে। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি, টিনের চালা, শাড়ি-জামা সব আকাশে উড়ছে। সেই সঙ্গে ফাইটার বিমান খুব নীচে দিয়ে গেলে যেমন শব্দ হয়, তেমন বিকট শব্দ। ভয়ে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিই। মনে হয়, কেউ যেন গোটা বাড়িটাকে ধরে ঝাঁকাচ্ছে। মিনিট দশেক পরে শব্দ ধীরে মিলিয়ে যাওয়ায় ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি টালির চালা সব উড়ে গিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা গ্রাম।

Advertisement

সেটা ছিল ১৯৯৩ সালের ৯ই এপ্রিলের দুপুর। সেই টর্নেডো খোশবাসপুর, গোকর্ণ, চাতরা এলাকার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল। ফণী আসার কথা শুনে আমার মতোই গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। প্রযুক্তিবিদ্যার কারণে ফণীর আগাম খবর জানতে পারায় আমরা সকলেই সতর্ক ছিলাম। কিন্তু ওই টর্নেডোর কথা আমরা আগে জানতে পারিনি। জমিতে কাজ করছিল গ্রামের মফেজ শেখ। তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেশ কয়েক মিটার দূরের এক পুকুরে নিয়ে গিয়ে ফেলেছিল। মুখ গুঁজে পড়েছিল মফেজ।

গ্রামের পূর্বদিকে পাটুনির বিল থেকে ওই টর্নেডো সৃষ্টি হয়ে হাতির শুঁড়ের মতো গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যে গোটা গ্রাম ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। বিধ্বস্ত অবস্থা চারদিকে। কেউ যেন পিচ রাস্তা উপড়ে ফেলে দিয়েছে। বহরমপুর-কান্দি রাজ্য সড়কের উপরে দিয়ে যাওয়ার সময়ে একটি বেসরকারি বাস ওই টর্নেডোর কবলে পড়ে। রাজ্য সড়কের উপর থেকে কয়েকশো মিটার দূরে একটি পুকুরের মধ্যে সেই বাস গিয়ে পড়ে। মারা যায় বেশ কয়েক জন। হাই-টেনশন বিদ্যুতের মোটা খুঁটি বেঁকে মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। বেশ কিছু দিন বিদ্যুৎ ছিল না গ্রামে।

Advertisement

ওই ঘটনার প্রায় ২৫ বছর পরে ফের ফণী আসার রাতে শুক্রবার তুমুল ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল। শুয়ে ঘুম আসছিল না। মনে হচ্ছিল ফের টর্নেডো আসবে না তো!

খোশবাসপুরের বাসিন্দা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন