বিয়েবাড়ির বাস থামিয়ে ম্যারাথন লুট

রবিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ শিবনিবাস থেকে তারকনগর যাওয়ার রাস্তায় এই ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্তদের মধ্যে এক দল কন্যাযাত্রীও ছিলেন। অভিযোগ, গয়না খুলে দিতে না-চাওয়ায় মায়ের কোল থেকে কয়েক মাসের শিশুকে কেড়ে নিয়ে হানাদারেরা মেরে ফেলার ভয় দেখায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৯ ০০:৩৪
Share:

তখনও আতঙ্ক কাটেনি বাসের যাত্রীদের (উপরে)। হাসপাতালে বাসচালক (নীচে বাঁ দিকে) ও ঘটনাস্থল। নিজস্ব চিত্র

রাস্তা আটকে একের পর এক যানবাহন দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের খুন করার হুমকি দিয়ে টানা দেড় ঘণ্টা ধরে লুটপাট চালাল দুষ্কৃতীরা!

Advertisement

রবিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ শিবনিবাস থেকে তারকনগর যাওয়ার রাস্তায় এই ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্তদের মধ্যে এক দল কন্যাযাত্রীও ছিলেন। অভিযোগ, গয়না খুলে দিতে না-চাওয়ায় মায়ের কোল থেকে কয়েক মাসের শিশুকে কেড়ে নিয়ে হানাদারেরা মেরে ফেলার ভয় দেখায়। গুলি করার কথাও বলে। দুই মোটরবাইক আরোহীকে মেরে নাক-মুখ ফাটিয়ে দেওয়া হয়। আতঙ্কে কাঁদতে থাকেন মহিলা ও শিশুরা। গোটা সময়ে কোথাও পুলিশের টহলদারি গাড়ি দেখা যায়নি। কৃষ্ণগঞ্জ থানা থেকে পুলিশ আসে দুষ্কৃতীরা সর্বস্ব নিয়ে চম্পট দেওয়ারও প্রায় পনেরো মিনিট পরে।

তিনটি গাড়ি, একটি অটো, একটি স্কুটার, একটি অটো ও একটি বাস দাঁড় করিয়ে লুটতরাজ চালানো হয়েছে। রাতের বেলায় ওই এলাকায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে রবিবারের এই ‘ম্যারাথন’ ডাকাতির ঘটনা। আতঙ্কিত স্থানীয় মানুষ। তাঁরা অধিকাংশই মনে করছেন, রাস্তাঘাট কতটা অরক্ষিত তা আরও এক বার প্রমাণিত হল। স্পষ্ট হল পুলিশের গাফিলতি। তবে পুলিশের পাল্টা দাবি, তারা যথাযথ ভাবে পাহারাদারি চালিয়েছে। টহলদারি গাড়ির কাজেও খামতি ছিল না। কাছে তারকনগর স্টেশনে রাত বারোটা দশের শেষ ট্রেনে অনেক দুষ্কৃতী যাতাযাত করে এবং অনেক যাত্রীও আসেন। সেই কথা মাথায় রেখে পুলিশের একাধিক টহলদারি গাড়ি এলাকায় ঘোরে। কিন্তু ঘটনাচক্রে সে দিন ঘটনা ঘটার সময় গাড়ি ছিল বেশ কিছুটা দূরে। ফলে ঘটনার কথা জেনে পৌঁছোতে দেরি হয়েছে।

Advertisement

জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমারের ব্যাখ্যা, “বিরাট এলাকা। পুলিশের গাড়ি তো একই সময় সব জায়গায় থাকতে পারে না। তাই কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পৌঁছে গিয়েছিল।” নিরাপত্তা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে সে ব্যাপারে পুলিশ সুপার বলছেন, “আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।” সোমবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।

বগুলায় বৌভাতের অনুষ্ঠান সেরে রবিবার রাতে বাসে ফিরছিলেন কন্যাযাত্রীরা। বাসে নারী ও পুরুষ মিলিয়ে প্রায় চল্লিশ জন ছিলেন। প্রত্যদর্শীরা জানিয়েছেন, বাঁশ ও স্পিডব্রেকার দিয়ে রাস্তা আটকে পর পর যান দাঁড় করাচ্ছিল দুষ্কৃতীরা। তার পর হামলা করছিল। বিয়েবাড়ির বাসের চালকের হাতে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে চাবি ছিনিয়ে নেয়। কন্যাযাত্রীদের মধ্যে ছিলেন পীযুষ ঘোষ। রাতের ঘটনার আতঙ্ক এখনও কাটেনি তাঁর। বললেন,, “কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরা বাসটা ঘিরে ফেলল। অকথ্য গালিগালাজ করতে-করতে দরজা খুলতে বলল। হুমকি দিল, কথা না-শুনলে বাসের দিকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাবে। ভয়ে দরজা খুলে দেওয়া হল। তখন ধারালো অস্ত্র হাতে দু’জন বাসে ঢুকে পুরুষদের টেনে বাইরে আনল। সকলের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল কেড়ে নিয়ে বাসের ছাদে তুলে দিল।” এর পর তারা আবার বাসে ঢুকে বাচ্চাদের মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে মহিলাদের কাছ থেকে মোবাইল ও হনা লুট করে। প্রায় দেড় ঘণ্টা তাণ্ডব চালিয়ে মাঠ দিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। এরই মধ্যে এক জন কোনওক্রমে তাঁর মোবাইলটি লোকাতে পেরেছিলেন। বাসের ছাদ থেকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তিনি লুকিয়ে ফোন করে খবর দেন দেয় বাড়িতে। সেখান থেকে খবর যায় কৃষ্ণগঞ্জ থানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন