সে-দিনের প্রত্যক্ষদর্শী বালিকার সাক্ষ্য

খুন, বাবার যাবজ্জীবন শুনে খুশি কিসমতারা

শমসেরগঞ্জ থানার রঘুনন্দনপুরে  চামেলি বিবির বাবার বাড়ি। বিয়ে হয়েছিল পাশেই হাউসনগর ঘোচাপাড়ায়। তাদের পাঁচ ছেলে মেয়ে। মদ্যপ স্বামী কোনও কাজকর্ম করত না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৩৯
Share:

ভয়, ভীতি, প্রলোভন কম আসেনি। সে সব ফুৎকারে উড়িয়ে বাবার বিরুদ্ধে আদালতে দাঁড়িয়ে সাক্ষী দিয়েছিল মেয়ে। আট বছরের ছোট্ট মেয়েই ছিল, ২০০৫ সালের ২৯ অক্টোবর বাবার হাতে মায়ের খুনের প্রত্যক্ষদর্শী। মেয়ের সেই সাক্ষ্যেই শুক্রবার বাবা খাইরুল শেখকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিলেন জঙ্গিপুরের প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক কাজী আবুল হাসেম।

Advertisement

শমসেরগঞ্জ থানার রঘুনন্দনপুরে চামেলি বিবির বাবার বাড়ি। বিয়ে হয়েছিল পাশেই হাউসনগর ঘোচাপাড়ায়। তাদের পাঁচ ছেলে মেয়ে। মদ্যপ স্বামী কোনও কাজকর্ম করত না। উল্টে স্ত্রীর বিড়ি বাঁধার মজুরির টাকাও ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করত নিয়মিত।

সরকারি আইনজীবী অশোক সাহা জানান, ঘটনার দিন স্ত্রী চামেলি ছিলেন রান্নাঘরে। বাড়ি ফিরে খাইরুল স্ত্রীর কাছে বিড়ি বেঁধে পাওয়া হপ্তা’র মজুরির টাকা কেড়ে নিতে যায়। গালিগালাজ দিতে শুরু করে। স্ত্রী চামেলি তার প্রতিবাদ করে। আর তখনই ঘর থেকে হাঁসুয়া এনে স্ত্রীকে রান্নাঘরের মধ্যেই কোপাতে শুরু করে। অন্তত কুড়িটি কোপে রক্তাক্ত অবস্থায় সেখানেই লুটিয়ে পড়ে চামেলি। সবটাই ঘটে আট বছরের ছোট্ট মেয়ের সামনে। সে চিৎকার করতে করতে ছুটে যায় মামার বাড়ি। ততক্ষণে গ্রামবাসীরাও ছুটে এসে রক্ত মাখা হাঁসুয়া সমেত ধরে ফেলে খাইরুলকে। পুলিশ এসে গ্রেফতার করে তাকে। পরে জামিন পেলেও ১৩ বছর ধরে সে মামলার বিচার চলছিল জঙ্গিপুর আদালতে। শুক্রবার খাইরুলকে স্ত্রী খুনে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয় আদালত। মাকে খুনের দায়ে বাবার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে শুনে রীতিমত খুশি মেয়ে কিসমতারা খাতুন। খুনের প্রত্যক্ষদর্শী আট বছরের সেই মেয়ে মাস চারেক আগে বিয়ে হয়ে এখন ধুলিয়ান শহরের তারবাগানে নিজের শ্বশুরবাড়িতে। সেখানেই শুক্রবার দুপুরে বাবার যাবজ্জীবন সাজার আদেশ শুনে প্রচন্ড খুশি কিসমতারা। বলছেন, “ফাঁসি নয়, যাবজ্জীবনই চেয়েছিলাম আমি বাবার। সারা জীবন যেন জেলের মধ্যে কাটাতে হয় তাকে।” মেয়ের কথায়, ‘‘আদালতে যাতে সাক্ষী না দিই তার জন্য বাবা চেষ্টার কসুর তো কম করেনি। লোভ দেখিয়ে যখন পারেনি, তখন ভয় দেখিয়েছে। তবু চোখের সামনে যা দেখেছি আদালতে গিয়ে সেটাই বলেছি। তখন ক্লাস থ্রি’তে পড়তাম। এখনও ভুলতে পারিনি আট বছর বয়সের সেই দুপুরটার কথা।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন