শোকার্ত সারিফুল শেখের পরিবার। কান্দিতে তোলা নিজস্ব চিত্র।
ফোনে ফোনেই আব্বাকে চেনা একরত্তি মেয়েটার।
দুনিয়া উল্টে গেলেও ফি রাতে বাবার সঙ্গে কথা বলা চায়ই তার। তা না হলে সে ঘুমোতে যাবে না। আরব মুলুক সেই কত দূরে। ফোনই ভরসা। আর শুধু মেয়েকেই বা দোষ দিয়ে কী লাভ। ফি রাতে ফোনটা যে সেই সৌদির দাম্মাম শহর থেকেই আসত। তা না হলে বাবার মন ভরত না যে। কারণ, কান্দির এই ঘুপচি বাড়িটা থেকে সারফুল শেখ যখন শেষবারের মতো সৌদি আরবে যান, তখন রুকসানা সবে এক।
ফি রাতের সেই ফোনটা আর আসবে না রুকসানার কাছে। কারণ নিজের ভাই এবং আরও এক প্রতিবেশীর সঙ্গে সেই সুদূর দাম্মামে এক দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ম়ত্যু হয়েছে সারফুলের। খবর এসেছে বৃহস্পতিবার রাতে। শুক্রবার পাড়ায় কোনও বাড়িতে আর হাড়ি চড়েনি।
কান্দি শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের নওয়াপাড়ার বাসিন্দা সারফুল শেখ (২৭), সাহিবুর শেখ (২৩) ও কাবিরুল শেখ (১৮)। সারফুল ও সাহিবুর দুই ভাই। কাবিরুল তাঁদের প্রতিবেশি।
টানাটানির সংসার। তাই বছরখানেক আগে এক পরিচিতের সঙ্গে প্রথমে সারফুল শেখ সৌদি আরবে পাড়ি দিয়েছিল। পরে ভাই সাহিবুর ও কাবিরুলকে দাম্মামে ডেকে নেন তিনি। সেখানে নির্মাণ কর্মী হিসেবে কাজ করতেন তাঁরা। সারফুলের দাদা শেরফুল সৌদিরই অন্য শহরে থাকেন। তাঁদের রোজগারে দোতলা বাড়ি উঠেছে কান্দির এঁদো গলিতে।
দাম্মামে একটি বাড়িতে তিন জন থাকতেন। বাড়ির লোকেরা ফোনে জানতে পেরেছেন, বুধবার ভোরে কাজ শেষে ঘরে ফিরে রান্না বসিয়েছিলেন তাঁরা। সেই সময় আচমকা গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে কোনওভাবে গ্যাস বেরিয়ে পুরো ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জখম অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানেই তাঁদের মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার খবর এসে পৌঁছনর পর থেকে এলাকায় শোকের পরিবেশ। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, রোজকার মতো বুধবার রাতেও সারফুলরা বাড়িতে ফোন করে দীর্ঘক্ষণ ফোন করে কথা বলেছেন। সারফুলের স্ত্রী জেসমিনা বিবি বলেন, “ও যখন বাড়ি ছেড়ে যায় তখন আমাদের মেয়ে রুকসানা মাত্র এক বছরের। ফোনেই প্রথম মেয়ের ‘আব্বা’ ডাক শুনছে ও। রোজ রাতে আব্বার সঙ্গে কথা না বললে তাঁর ঘুম হত না। এখন মেয়েটাকেই বা কী জবাব দেব!’’ কান্নায় হারিয়ে যায় তাঁর বাকি কথাগুলি।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে মৃতদেহগুলির ছবি। কাবিরুলের বাবা আলি শেখ বলেন, “ওই দেহ নিয়ে এসে কী করব? তার থেকে আমার তাজা ছেলের মুখটাই মনের মধ্যে থেকে যাক চিরকালের মতো।’’ কান্দির মহকুমা শাসক অনন্য জানা বলেন, “অত্যন্ত দুঃখ জনক ঘটনা। পরিবার যদি দেহগুলি আনতে চায়, সরকার সহযোগিতা করবে।”