জ্বরজারি দূর করতে এ বার স্কুলে সহজপাঠ

সহজ পাঠ। শুরু হচ্ছে স্কুলেই। প্রার্থনার পরে রোজ মাস্টারমশাইরা বার বার সাবধান করে দিচ্ছেন, বাড়ি এব‌ং আশপাশে যেন জল না জমে। নিয়ম করে মশারি টাঙিয়ে শোওয়া বাধ্যতামূলক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২৩
Share:

সহজ পাঠ। শুরু হচ্ছে স্কুলেই। প্রার্থনার পরে রোজ মাস্টারমশাইরা বার বার সাবধান করে দিচ্ছেন, বাড়ি এব‌ং আশপাশে যেন জল না জমে। নিয়ম করে মশারি টাঙিয়ে শোওয়া বাধ্যতামূলক। শুধু তাদের জন্যই নয়, পড়ুয়ারা যেন বাড়ির সকলকে সাবধান করে।

Advertisement

গত বছর নদিয়ায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছিল। স্বাস্থ্য দফতরের পর্যবেক্ষণ ছিল, সচেতনতার অভাবেই মশার বংশবৃদ্ধি হয়েছিল। এলাকায় এলাকায় সচেতনতার প্রচার চালিয়ে কোনও লাভ হয়নি। সেই জন্য এ বার পড়ুয়াদের বুঝিয়ে ‘সহজপাঠ’-এর দাওয়াই ঠিক করেছে তারা। সেই মতো জেলার সব স্কুলেই প্রার্থনার লাইনেই পড়ুয়াদের এ বিষয়ে সচেতন করছেন শিক্ষকরা।

ম্যালোরিয়া-ডেঙ্গি ঠেকাতে নদিয়া কোমড় বেঁধে নামলেও পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদে তেমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের বাইরে তেমন উদ্যোগ দেখা যায়নি।

Advertisement

নদিয়ায় গত বছর ১৬৮০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৮৫জন। ডেঙ্গিতে মৃত্যু না হলেও ম্যালেরিয়াতে মৃত্যু হয়েছিল এক জনের। কৃষ্ণনগর-১ ব্লকে ২৯৮ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, জেলাতে একজনও পতঙ্গবিদগ নেই। প্রয়োজনে কলকাতা থেকে পতঙ্গবিদ পাঠানো হয়। জেলা ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া আটকাতে বিশেষ কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে। পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গি ম্যালেরিয়া সম্পর্কে বাসিন্দাদের সচেতন করছে। মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৫দিন অন্তর স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাবেন। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কুই্যজ প্রতিযোগিতা করা হবে।

ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যায় গতবার পিছিয়ে ছিল না মুর্শিদাবাদও। গত বছর জেলায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন ১১৩২ জন। এ বছর ইতিমধ্যেই ৩৯ জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, বহরমপুর ব্লক-সহ মুর্শিদাবাদের সাতটি পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গির প্রবণতা রয়েছে। তবে জঙ্গিপুর ও কান্দি মহকুমা এলাকায় গত কয়েক বছরে প্রচুর মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে সারা জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৭১৮ জন।

এ বছর জেলায় ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া শুরু হয়ে গেলেও তা নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। ডেঙ্গি রুখতে কেবলমাত্র স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। মশা মারতে এখন পর্যন্ত পুরসভা অথবা স্বাস্থ্য দফতর কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। নিকাশি নালাগুলি সাফ-সুতরো করে সেখানে নিয়মিত ব্লিচিং দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু সেই কাজ এখনও হয়নি। মশানাশক ছড়ানোর কামান এলাকায় এলাকায় ঘোরানো হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হলেও তাও হয়নি বলে অভিযোগ।

বহরমপুর-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে মশার উপদ্রব মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস বলেন, ‘‘জেলার যে সব এলাকা ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া প্রবণ বলে চিহ্নিত হয়েছে, সেই এলাকার স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ চলছে। পাশাপাশি রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করারও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’’

নদিয়ার মতো মুর্শিদাবাদেও কোনও পতঙ্গবিদ নেই। নিরুপমবাবু জানান, অবিলম্বে পতঙ্গবিদ নিয়োগ করার জন্য স্বাস্থ্য ভবনে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বহরমপুরে মশার দাপট দিন দিন বাড়ছে। পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, ‘‘নিয়মিত এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি ব্লিচিং ছড়ানো হয়। কিন্তু মশার উপদ্রব থেকে কিছুতেই রেহাই মিলছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন