ভরসা এই বাঁশের সাঁকো।— নিজস্ব চিত্র
শিয়রে ভোট। অথচ গ্রামে কোনও সাড়াশব্দ নেই। ভোটের প্রচারে গ্রামে কোনও রাজনৈতিক প্রচার নয়, কোনও দেওয়াল লিখন নয়, কোনও পোস্টারও নয়—এমনই ফরমান জারি করেছেন সামশেরগঞ্জের অদ্বৈতনগর গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামের উন্নয়ন নিয়ে উপেক্ষায় ক্ষুব্ধ হয়ে এককাট্টা হয়েছেন সিপিএম, কংগ্রেস ও তৃণমূল সব দলের নেতারা। গ্রামবাসীদের চাপে প্রচারে এসে বাধা পেয়ে ঘুরে গিয়েছেন একাধিক প্রার্থী। অন্যান্য বার গ্রামে ভোট এলেই মিটিং-মিছিল লেগেই থাকত। ফি দিন বসত পথসভা। এ বার গ্রামবাসীদের নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর সাহস দেখাননি কেউই। এমনকী ভোট নিয়ে নিষেধাজ্ঞা ও ভোট বয়কটের খবর পেয়েও নির্বাচন কমিশনের তরফেও গ্রামে পা পড়েনি কোনও সরকারি কর্তার!
কেন এই নিষেধাজ্ঞা গ্রামবাসীদের?
গ্রামের সিপিএম নেতা হিসেবে পরিচিত মহম্মদ আব্বাসউদ্দিন জানান, এ পারে ঝাড়খণ্ডের ইসলামপুর। ওপারে পশ্চিমবঙ্গের অদ্বৈতনগর। মাঝে মাসনা নদী। সমসেরগঞ্জের ভাসাই পাইকর থেকে অদ্বৈতনগর আসার সহজ পথ মাসনা নদী পেরিয়ে বড় জোর ৫০০ মিটার। পাশেই ভাসাই পাইকর হাইস্কুল। হাট-বাজার, এমনকী গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসও। ঘুর পথেও গ্রামে আসা যায়, তবে তা আসতে হবে ঝাড়খণ্ডের পাকুড় মফঃস্বল থানা পেরিয়ে প্রায় ৭ কিলোমিটার ঘুরে। প্রায় ১২৫ মিটার চওড়া মাসনা নদীর উপর সেতুর দাবি অনেক দিনের। সেই সেতু তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু সেতু তৈরি হয়নি আজও।
গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য উমেদুল্লা জানান, প্রায় ৬ হাজার লোকের বাস ওই গ্রামে। গ্রামে তিনজন গ্রাম পঞ্চায়েত ও একজন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। গ্রামেরই এক ব্যক্তি নিজের উদ্যোগে নদীর উপর বাঁশের মাচা তৈরি করে মানুষ, সাইকেল, মোটরবাইক যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন। ২-৫ টাকা করে পারানির পয়সা আদায় করেন। গ্রামের ছেলেমেয়েরা ওই বাঁশের মাচা পেরিয়ে স্কুলে যায়। একাধিক বার দুর্ঘটনাও ঘটেছে। ভরা বর্ষায় নদীতে জল থাকলে যাতায়াত দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘‘প্রসুতিদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে কি দুর্ভোগ পোহাতে হয় তা আমরাই জানি।’’ তাই তাঁরা গ্রামে বোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এই গ্রামেই বাড়ি কংগ্রেসের উপপ্রধান আব্দুল গফুরের। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামে তৎকালীন জঙ্গিপুরের সাংসদ প্রণব মুখোপাধ্যায় এসেছিলেন। গ্রামবাসীদের দুর্দশা দেখে সেতু তৈরির আশ্বাস দেন। কিন্তু সেতু হয়নি।’’ পরে এই এলাকা যুক্ত হয় মালদহ দক্ষিণ লোকসভায়। দু’দুবার সাংদস আবু হাসেম খান চৌধুরী গ্রামে যান। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজেও তাঁকে বহুবার বলেছি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। তাই গ্রামবাসীদের ক্ষোভ স্বাভাবিক। সবাই যখন চাইছে ভোট বয়কট করতে তা সমর্থন করেছি।”
গ্রামের গৃহবধূ সামিমা বিবি বলেন, ‘‘আর কত আবেদন নিবেদন করব। তাই আমরা ভোটে নেই।”
সামশেরগঞ্জে এ বারের প্রার্থী বর্তমান সিপিএম বিধায়ক তোয়াব আলি বলেন, “সেতুটি করতে দেড় থেকে দু’কোটি টাকা প্রয়োজন। একজন বিধায়কের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। তবে গ্রামবাসীদের দাবিটি যুক্তিসঙ্গত। তারা ভোট দেবে কিনা সেটা অবশ্য তাদের ব্যাপার। তা দেখার ভার নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের।”