ভবতারিণী মন্দির সংস্কারে ভক্তেরাই

নদিয়ার সিংহাসনে তখন কৃষ্ণনগর রাজ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদারের পুত্র রাঘব। রাজত্বের শেষ পর্বে নবদ্বীপের গঙ্গার ধারে মন্দিরসহ প্রকাণ্ড এক গণেশ মূর্তি এবং শিব লিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করতে মনস্থ করেন। ১৬৬৯ সালে গণেশ মূর্তি প্রতিষ্ঠাও হল। তার অল্পকালের মধ্যেই মারা গেলেন রাঘব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৭ ০১:২১
Share:

নবদ্বীপের ভবতারিণী মন্দির। নিজস্ব চিত্র

নদিয়ার সিংহাসনে তখন কৃষ্ণনগর রাজ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদারের পুত্র রাঘব। রাজত্বের শেষ পর্বে নবদ্বীপের গঙ্গার ধারে মন্দিরসহ প্রকাণ্ড এক গণেশ মূর্তি এবং শিব লিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করতে মনস্থ করেন। ১৬৬৯ সালে গণেশ মূর্তি প্রতিষ্ঠাও হল। তার অল্পকালের মধ্যেই মারা গেলেন রাঘব। শিব মন্দিরের অসম্পূর্ণ কাজ সমাপ্ত করলেন তাঁর পুত্র রুদ্র রায়। নাম হল রাঘবেশ্বর শিব। প্রাচীন নবদ্বীপের ইতিহাসে সুরম্য সেই মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়।

Advertisement

প্রায় একশো বছর পর ১৭৬০ সালে নবদ্বীপ পড়ল ভাঙনের কবলে। তখন নবদ্বীপের গঙ্গা শহরের দক্ষিণ দিক দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে বইত। ভাঙনে ওই জোড়া মন্দির নদীর গর্ভে যাওয়ার উপক্রম হল। তখন রাজা দোর্দণ্ডপ্রতাপ কৃষ্ণচন্দ্র। তাঁর উদ্যোগে দুই বিগ্রহ মন্দির থেকে সরিয়ে আনা হল নগরের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে। কিন্তু এরপরই শুরু হল বিতর্ক। প্রকাণ্ড ওই দুই বিগ্রহ স্থানান্তরের সময় বহু মানুষ স্পর্শ করেছে। তাই অপবিত্র হয়েছে বিগ্রহ। শোধন না করে সেবা পুজো করা যাবে না। কী ভাবে শোধন হবে? পণ্ডিতেরা জানালেন, বারো বছর বিগ্রহ মাটির তলায় পুঁতে রাখতে হবে।

কিন্ত বারো বছর কেটে গেলেও বিগ্রহ আর তোলা হয়নি। ফের ওই বিগ্রহের খোঁজ পড়ল কৃষ্ণচন্দ্রের প্রপৌত্র মহারাজ গিরিশচন্দ্রের আমলে। কিন্তু এ বার অন্য বিপত্তি। মাটি খুঁড়ে তুলতে গিয়ে ভেঙে গেল গণেশের শুঁড়। অঙ্গহানি হওয়ায় মূর্তি পুজোর অযোগ্য বলে বিবেচিত হল। বিষণ্ণ রাজা পণ্ডিতদের শরণাপন্ন হলেন—কোনও উপায়ই কী নেই? পণ্ডিতেরা বিধান দিলেন, যদি ওই ভাঙা মূর্তি থেকে অন্য কোনও মূর্তি নির্মাণ করানো যায়, তা হলে সেই মূর্তির পুজো হতে পারে। অজ্ঞাতপরিচয় কোনও শিল্পী গণেশ মূর্তি থেকে তৈরি করেন মহারাজ গিরিশ্চন্দ্রের আরাধ্যা দেবী আনন্দময়ীর মূর্তি।

Advertisement

তাঁর নামকরণ হল ভবতারিণী। নবদ্বীপ পোড়ামা প্রাঙ্গণের এক দিকে প্রতিষ্ঠা হল ভবতারিণী এবং অন্য দিকে সেই শিব লিঙ্গ। নতুন নামকরণ হল ভবতারণ শিব। সময়টা ১৮২৫ সাল।

কিন্তু প্রায় দু’শো বছরের প্রাচীন মন্দিরকে ততোধিক প্রাচীন এক বট গাছের ঝুরি আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। কিন্তু ওই বটগাছই নবদ্বীপের গ্রাম্যদেবী পোড়ামা বলে কয়েকশো বছর ধরে পূজিত। ফলে বৃক্ষ দেবতারূপী ওই বটগাছ কেটে মন্দির সংস্কারের কাজ করা সম্ভব নয়। এই অবস্থায় সম্প্রতি স্থানীয় কিছু ভক্ত মন্দিরের সেবায়েত মানিকলাল ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে বটগাছ না কেটে মন্দিরের সংস্কারের কাজে শুরু করেছেন। মানিকলাল বলেন, “গাছ বাদে মন্দিরের মেঝে, দেওয়াল, বারান্দা, সিঁড়ি, দরজা সব কিছুরই আমূল সংস্কার করা হবে।”

কিন্তু কেন সরকারি উদ্যোগে সংস্কার হবে না শতাব্দী প্রাচীন মন্দিরের? তার উত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন