ধান কেনা নিয়ে হল বৈঠক। শুক্রবার কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র
ধান কেনার লক্ষ্যপূরণ করলেই হবে না, ফড়েরাজ বন্ধ করে প্রকৃত চাষিরাই যাতে ধান বিক্রি করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
শুক্রবার কৃষ্ণনগরে জেলা পরিষদের প্রেক্ষাগৃহে এই কথাটাই বারবার উঠে এল জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্তাদের মুখে। যার অর্থ, জেলা জুড়ে ফড়েরাজ যে চলছে তা তাঁরা আগে থেকেই জানেন। মুখ্যমন্ত্রী কড়া অবস্থান নেওয়ায় এখন নড়চড়ে বসেছেন সকলে।
নদিয়া জেলায় গত সেপ্টেম্বর থেকে আগামী অগস্ট পর্যন্ত এক বছরে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ১৭ লক্ষ মেট্রিক টন। ডিসেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ১০০ মেট্রিক টন। সরকারি হিসেব বলছে, ইতিমধ্যে প্রায় ১৭ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন কেনা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই ধানের একটা বড় অংশই ফড়েদের জোগান দেওয়া বলে অভিযোগ।
দিন দুয়েক আগে জেলাশাসকদের নিয়ে নবান্নে ধান কেনা সংক্রান্ত বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হুঁশিয়ারি দেন, ধান কেনা নিয়ে কোনও বেনিয়ম বরদাস্ত করবেন না। তার পরেই এ দিন জেলার সাংসদ, বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসন ও খাদ্য দফতরের কর্তারা। জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুন্ডু বলেন, “স্বচ্ছতার অভাব আছে নিশ্চয়ই। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেই হবে না। দেখতে হবে, প্রকৃত চাষিরাই যেন ধান বিক্রি করতে পারে।”
কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস আবার ফড়ে চক্র সক্রিয় হওয়ার জন্য প্রচারের অভাবকে দায়ী করেন। প্রান্তিক চাষিরা ধান বিক্রির কথা জানতে পারছেন না। ফড়েরা তারই সুযোগ নিচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। ক্রয়কেন্দ্রের দূরত্ব বেশি হওয়া এবং টাকা পেতে দেরি হওয়াতেও চাষিরা ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। ধান কেনা নিয়ে অনিয়মের কথা বলেন জেলার দুই মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস এবং রত্না ঘোষও।
জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার অবশ্য দাবি করছেন, তাঁরা প্রতিটি ক্রয়কেন্দ্রে পুলিশ মোতায়ন করেছেন। শুধু তা-ই নয়, পুলিশ নানা ভাবে খোঁজ রাখছেন কোথাও ফড়েরা সক্রিয় হচ্ছে কি না। ফড়েদের ধান কেনাবেচার কথা জানতে পারলে পুলিশকে খবর দেওয়ার জন্যও তিনি জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ করেন। ধান কেনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “চাষিদের যেন ফেরানো না হয়। ধান বিক্রির টাকাও দ্রুত দিতে হবে। আপনারা বললে আমরা আরও ক্রয়কেন্দ্র খুলব।”
বৈঠকের শেষ দিকে আসেন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দলীয় কর্মসূচিতে পরে তিনি দাবি করেন, “কৃষকদের ঠকিয়ে যারা মুনাফা করছে, সেই সব ফড়েদের উপরে সরকার নজর রাখছে। প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে।”
সবই অবশ্য মুখের কথা। কাজের কাজ কতটা কী হয়, সেটাই দেখার।