শব্দের গুঁতোয়। বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
সামনেই মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক। এই তো মন দিয়ে পড়াশোনার সময়। কিন্তু, তাতে কী? পুজোর দু’দিন পরেও যে ফুরোয়নি বাগদেবীর আরাধনা। উদ্যোক্তাদের যুক্তি, ‘‘বচ্ছরকার উৎসব। তাই মাইক-সাউন্ড বক্স বাজিয়ে একটু আনন্দ হচ্ছে আরকি।’’ আর তাতেই শিকেয় উঠেছে পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনা।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এক টানা ডিজে বক্স এবং মাইকের আওয়াজে কান ঝালাপালা হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা বহরমপুরের পাড়ায় পাড়ায়। অভিযোগ, দরজা-জানালা বন্ধ করেও মন বসানো যাচ্ছে না পড়ায়। সরস্বতী পুজো পেরনোর দু’দিন পরেও এমন অবস্থা নাজেহাল অবস্থা শহরের পরীক্ষার্থীদের।
শহর জুড়ে এমন শব্দ-তাণ্ডব চললেও নির্বিকার পুলিস-প্রশাসন। পুলিশের এমন ভূমিকায় ক্ষুব্ধ শহরের বাসিন্দারা। পুলিশের বক্তব্য, তারা অভিযোগের অপেক্ষাতেই রয়েছেন। তা পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মাদ্রাসা বোর্ডের মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং ১৫ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য স্কুলগুলিতে চলছে ‘স্টাডি লিভ’। পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন, ‘‘পড়ার পরিবেশ কই, যে পড়ব?’’
বহরমপুর মহাকালি পাঠশালা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নন্দিনী দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আমাদের সময়ে দেখেছি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আগে পাড়ার কাকা-জেঠুরা পাড়া শান্ত রাখার চেষ্টা করতেন। কিন্তু, এখন তো দেখছি সব উল্টো। পরীক্ষা নিয়ে কারও কোনও হেলদোলই নেই।’’
গত দু’দিন ধরে ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকার ইন্দ্রপুরী মোড়ে ৩৫-৪০ মিটারের মধ্যে দু’টি জায়গায় সকাল থেকে তারস্বরে ডিজে বক্স ও মাইক বাজানো চলেছে। সেখানে বৃহস্পতিবার রাত প্রায় দেড়টা পর্যন্ত সেখানে অর্কেস্ট্রা বাজিয়ে জলসা চলেছে।
শুক্রবার সকাল থেকে একটি থামলেও অন্য পুজোর মাইক বেজেছে ভয়াবহ শব্দে। এখানে পুলিশ কিন্তু, একবারের জন্যও ঢু মারেনি। এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক চৈতালী পাল সাহা জানান, ছেলে গোরাবাজারে গৃহশিক্ষকের বাড়িতে গিয়েছিল পড়তে। সেখান থেকে তাকে আনতে গিয়ে গৃহশিক্ষকের বাড়ির সামনে বেশি ক্ষণ দাঁড়িয়ে পারিনি। ডিজে-র তীব্র কান ঝালাপালা হয়ে গেল।
গোটা বহরমপুর শহর জুড়ে একই অবস্থা চলছে বলে অভিযোগ গোরাবাজার আইসিআই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত দত্তের। জয়ন্তবাবু জানান, পুজো-পরবে ডিজে বক্স ও মাইকের কান ফাটানো আওয়াজে পড়াশোনা সিকেয ওঠা স্বাভাবিক। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এইভাবে পড়াশোনা হয়?’’
বহরমপুর লাগোয়া হাতিনগর-রাধারঘাট-গোয়ালজান-সৈয়দাবাদ-কাশিমবাজার এলাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাউল গান ও কীর্তন। হাতিনগর হিকমপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরস্বতী পুজোয় ও প্রতিমা ভাসানে ডিজে বক্স-সহ তার শোভাযাত্রা দেখে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি।
ভয়াবহ অবিজ্ঞতা পরীক্ষার্থীদের। সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জয়দীপ সাহার কথায়, ‘‘মনোসংযোগ করতে অসুবিধে হচ্ছে।’’ জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ করা হবে। কেউ এ নিয়ে থানায় ফোন করলে তার নাম ও ঠিকানা অবশ্যই গোপন থাকবে।’’
কী যুক্তি পুজো উদ্যোক্তাদের? গোরাবাজারের একটি পুজোর উদ্যোক্তা শ্যামল হালদার বলেন, ‘‘পুজোয় সবাই আনন্দ করতে চাইছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরাও রয়েছে। তাই, একটু ডিজের ব্যবস্থা রাখতে হচ্ছে।’’ বানজেটিয়ার এক পুজো কমিটিতে শুক্রবার রাতেও চলছে জলসা। কমিটির সদস্য অনাথবন্ধু দাস বলেন, ‘‘এলাকায় একটি কীর্তন গানের আসর চলছে। তার শব্দই বেশি।’’