মুখের কথায় বাড়ি ভাড়া নয়, সতর্ক করিমপুর

সহজে আর বাড়ি ভাড়া মিলবে না! পরপর বেশ কয়েকটি ঘটনার পরে এমনটাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সীমান্তের শহর করিমপুর। খাগড়াগড় কাণ্ডের পরেই নড়েচড়ে বসেছিল করিমপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত। রীতিমতো ফর্ম ছাপিয়ে ভাড়াটেদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য রাখারও কাজ শুরু করেছিল তারা। সম্প্রতি করিমপুর থেকে ধরা পড়েছে ছ’জন দুষ্কৃতী।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

করিমপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৭
Share:

বাড়ি ভাড়ার নিয়ম মানতে মাইকে প্রচার। —নিজস্ব চিত্র।

সহজে আর বাড়ি ভাড়া মিলবে না!
পরপর বেশ কয়েকটি ঘটনার পরে এমনটাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সীমান্তের শহর করিমপুর। খাগড়াগড় কাণ্ডের পরেই নড়েচড়ে বসেছিল করিমপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত। রীতিমতো ফর্ম ছাপিয়ে ভাড়াটেদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য রাখারও কাজ শুরু করেছিল তারা। সম্প্রতি করিমপুর থেকে ধরা পড়েছে ছ’জন দুষ্কৃতী। বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া একটি বাড়িতে থেকে তারা করিমপুর ও ডোমকল এলাকায় ব্যাঙ্ক ডাকাতির ছক কষছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। তারপরেই ফের নড়েচড়ে বসেছে করিমপুর ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত।
ইতিমধ্যেই মাইকে প্রচার শুরু করেছে করিমপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত। দু’ একদিনের মধ্যে প্রচার শুরু করবে করিমপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতও। কী বলা হচ্ছে ওই প্রচারে? ১) কাউকে ঘর ভাড়া দিলে ভাড়াটে সম্পর্কে সমস্ত তথ্য সেই বাড়ির মালিককে জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত ও থানায়। ২) বাড়ি ভাড়া দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত থেকে উপযুক্ত লাইসেন্স জোগাড় করতে হবে। ৩) স্থানীয় কোনও পরিচিত ব্যক্তির সুপারিশ ছাড়া অপরিচিত কাউকে বাড়ি ভাড়া দেওয়া যাবে না। ৪) ভাড়াটেকে বাড়ি ভাড়ার রসিদ দেওয়া বাধ্যতামূলক। ৫) ভাড়াটের আচরণ কোনও ভাবে মালিকের সন্দেহজনক বলে মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনকে জানাতে হবে।

Advertisement

আন্তঃরাজ্য ব্যাঙ্ক ডাকাতি চক্রের সঙ্গে যোগ রয়েছে এমন ওই ছ’জন সম্প্রতি করিমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল। বাড়ির মালিককে তারা বৈধ পরিচয়পত্রও দেখিয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ওই ছ’জনই পুলিশের জালে ধরা পড়ে। করিমপুর থানার পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, ধৃতদের পরিকল্পনা ছিল ডোমকল এলাকার কোনও ব্যাঙ্কে ডাকাতি করা। পরের ‘টার্গেট’ ছিল করিমপুর। ধৃতেরা জেরায় সে কথা কবুলও করেছে বলে দাবি পুলিশের।

সীমান্তবর্তী এই এলাকায় কর্মসূত্রে বহু মানুষ বাইরে থেকে এসে বাড়ি ভাড়া করে থাকেন। এরকম কিছু একটা ঘটনার পরে হইচই হয়। তারপর থিতিয়েও যায়। অনেক সময় এরকম কোনও অঘটনের পরে ভাড়াটেদের আসল নাম, ঠিকানা, পরিচয় খুঁজতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যায় পুলিশ প্রশাসনের। কিন্তু ভাড়াটেদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য যদি আগে থেকেই স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত ও থানায় থাকে তাহলে সেই সমস্যাটা হয় না। সেই ভাবনা থেকে পঞ্চায়েতের এমন পদক্ষেপ। তবে এর আগেও ২০০৮ সালে করিমপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কেন? পুলিশ ও গোয়েন্দা দফতর সূত্রের খবর, সে বছর অক্টোবরে কলকাতার পাম অ্যাভিনিউ ও মেফেয়ার রোডের সংযোগস্থলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাড়ির কাছে ধরা পড়ে কুখ্যাত বাংলাদেশি দুষ্কৃতী সুব্রত বাইন। সুব্রত ২০০৫ সাল থেকে বেশ কয়েক বছর করিমপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে ছিল। করিমপুর বাজারে একটা দোকান ঘরও ভাড়া নিয়ে সে রেডিমেড পোশাকের দোকান চালাত। ‘মামা’ বলেই বেশি পরিচিত ছিল সীমান্তের ওই এলাকায়।

Advertisement

সিআইডি-র এক কর্তা, যিনি সে সময়ে নদিয়া জেলা পুলিশে ছিলেন, তিনি জানান, সুব্রত ধরা পড়ার পরে উঠে আসে মুর্শিদাবাদ এলাকার কওসরের নামও। কওসর শেখই এ-পারে চলে আসা সুব্রতকে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। সুব্রত ধরা পড়ার পরে কওসরের খোঁজেও পুলিশ করিমপুরে এসেছিল। কওসরও সেই সময় করিমপুরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। জেলা গোয়েন্দা সূত্রের খবর, করিমপুর ও তার লাগোয়া এমন কিছু এলাকা রয়েছে, যেখানে আত্মগোপন করে থাকা সহজ। সেই এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে কিংবা কাউকে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে কোনও দুষ্কৃতী থাকলে গ্রামের মানুষের পক্ষে বুঝতে পারা অসম্ভব। আর এই সুযোগটাকেই বারবার কাজে লাগায় দুষ্কৃতীরা।

করিমপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত উপপ্রধান কংগ্রেসের তারক সরখেল বলেন, ‘‘বছর সাতেক আগেও আমরা কাজটা শুরু করেছিলাম। কিন্তু মাঝপথে তা বন্ধ হয়ে যায়। খাগড়াগড় কাণ্ডের পর থেকে ফের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। আর সম্প্রতি এই ছ’জন ধরা পড়ার পরে আর কোনও ঝুঁকি নিয়ে চাই না আমরা। সেই কারণেই এই প্রচার।’’

করিমপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সিপিএমের সুজয়কুমার বিশ্বাস বলেন, “আমরাও পঞ্চায়েতের তরফে এই একই বিষয়ে দু’-একদিনের মধ্যে প্রচার শুরু করব।’’ পঞ্চায়েতের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ঘর মালিকরাও। তাঁরা জানান, ঘর ভাড়া দিয়ে আর কে বিপাকে পড়তে চায়! তার থেকে ভাড়াটের যাবতীয় তথ্য পঞ্চায়েত ও থানায় জমা দেওয়া সবদিক থেকেই নিরাপদ। তাতে সুরক্ষিত থাকবে গোটা শহরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন