নবদ্বীপে ফাগু খেলত গোরা বিষ্ণুপ্রিয়া সঙ্গে

এক উৎসব শেষের কুঞ্জভঙ্গের বেদনা মিলিয়ে যায় নতুন উৎসবের অধিবাসে। উৎসব শেষ হয়েও শেষ হয় না নবদ্বীপে। দোল পূর্ণিমার পরের কৃষ্ণ পক্ষের প্রথম দশ দিন ধরেই রঙের রেশ থাকে নবদ্বীপে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৭ ০২:২১
Share:

দোল: নবদ্বীপে চলছে দশম দোল। ফাইল চিত্র

এক উৎসব শেষের কুঞ্জভঙ্গের বেদনা মিলিয়ে যায় নতুন উৎসবের অধিবাসে।

Advertisement

উৎসব শেষ হয়েও শেষ হয় না নবদ্বীপে। দোল পূর্ণিমার পরের কৃষ্ণ পক্ষের প্রথম দশ দিন ধরেই রঙের রেশ থাকে নবদ্বীপে। চৈতন্যধাম নবদ্বীপে দোল শেষ হওয়ার পর দশ দিন পরেও সকাল সন্ধ্যার বাতাসে ভাসছে গুঁড়ো আবির।

হঠাৎ ঢুকে পড়ছে নগর সংকীর্তনের দল। মুহূর্তের মধ্যে শহরের পিচঢালা পথ যেন বৈষ্ণব ভজনকুঠির নাটমন্দির। সুর আর সুগন্ধে তখন ভরা বসন্ত নগর পথে।

Advertisement

এ ভাবেই হাজার বছর কিম্বা তারও বেশি সময় ধরে উৎসবের হাত ধরেই সমৃদ্ধ হয়েছে নদী পাড়ের নবদ্বীপ। উৎসবকে ঘিরেই আবর্তিত হয় স্থানীয় অর্থনীতি। নবদ্বীপের মানুষের কাছে উৎসবের অর্থ তাই অন্যরকম। উৎসবেই জীবন। উৎসবই জীবিকা। এহেন নবদ্বীপের দীর্ঘতম উৎসব হল দোল। বিভিন্ন মন্দিরে দোল পূর্ণিমার পরেও চলে তৃতীয় দোল, চতুর্থ দোল, পঞ্চম দোল,সপ্তম দোল কিম্বা দশম দোল। বৃন্দাবনের বর্ষাণা হোলি, জাওয়াট হোলি বা নন্দগ্রাম হোলির মত, এসব দোলের প্রতিটি স্বমহিমায় উজ্জ্বল।

দোলের পরেও এতদিন ধরে দোল ভূ-ভারতে আর কোথাও হয় না। বিভিন্ন মন্দিরের প্রধানের জানিয়েছেন কমবেশি তিনশো বছর ধরে এই ভাবে দোল উদযাপিত হয়ে আসছে নবদ্বীপের বৈষ্ণব মন্দিরগুলিতে।

আর এই নানা রঙের দোলের মূল কারন চৈতন্যদেব স্বয়ং। চৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথি। তাই প্রথা মেনে এখানে দোল উদযাপন করা হয়না। পূর্ণিমার পর থেকে যে মন্দির যে তিথিতে দোল পালন সেই তিথি অনুসারে তৃতীয়, পঞ্চম, দশম দোল ইত্যাদি নামকরন করা হয়।

সোনার গৌরাঙ্গ মন্দিরের প্রধান স্বরূপ দামোদর গোস্বামী জানান, “নবদ্বীপের অপর নাম গুপ্ত বৃন্দাবন। রাধাকৃষ্ণের দোল শেষ না হওয়া পর্যন্ত মহাপ্রভুর দোল বিধেয় নয়। সেই জন্য আমাদের পূর্বপুরুষেরা মূল দোলের পাঁচ দিন পরে পঞ্চম দোলের প্রথা চালু করেছিলেন অন্তত আড়াই’শো বছর আগে।” পঞ্চম দোলের আগের দিন হয় চাঁচর বা নেড়াপোড়া।

মহাপ্রভু মন্দিরে পালিত দশম দোল প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সুদিন গোস্বামী জানান, কথিত রয়েছে, বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর দুই প্রিয় সখি কাঞ্চনা এবং অনিতা এই দশমী তিথিতে গৌরাঙ্গদেবের সঙ্গে রঙ খেলে ছিলেন।

মহাপ্রভুকে বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী সহ দোলনায় বসানো হয়। গাওয়া হয় গোস্বামীদের নিজস্ব হোলি কীর্তন ফাগু খেলত গোরা বিষ্ণুপ্রিয়া সঙ্গে, মারে পিচকারি দুঁহুঁ দোঁহা অঙ্গে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন