হতবাক: বাড়িতে আনিসুর রহমান। ডোমকলে। —নিজস্ব চিত্র।
তিনটে উইকেট অক্ষত।
একুশটার মধ্যে মোটে তিনটে। তৃণমূলের মুকুটে তিনটে কাঁটা!
শাসকদলের বেশির ভাগ প্রার্থীর মধ্যে এ বার প্রতিযোগিতা ছিল, ফাঁকা মাঠে কে কত গোল করতে পারে। বিরোধীদের গর্তে ঢুকিয়ে দিয়ে, বেয়াড়া ভোটারদের বাড়িতে বসিয়ে রেখে সব ব্যবস্থা পাকা করাই ছিল।
স্বভাবতই, বুধবার গণনার পরে দিনভর নানা চর্চা হাওয়ায় উড়ল।
যেমন শাসক দলেই জোর খবর, উপর থেকে বলা হয়েছিল, ‘‘পুরো ২১-০ করিসনি বাপ! দু’চারটে ছেড়ে রাখিস।’’ যেন টোকার আগে কেউ বলে দিয়েছে, পুরো একশোয় একশো মেরে দিও না যেন! লোকের সন্দেহ হবে, বিপাকে পড়বে।
আবার এমনও শোনা গিয়েছে যে, জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেন নাকি কলকাতায় গিয়ে কথা দিয়ে এসেছিলেন, এ বার ডোমকলের ভোটে কোনও রক্ত ঝরবে না। ছেলে সৌমিকের সে কথা রাখার দায় ছিল। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের মতো কয়েকটা জায়গায় দখলদারি করতে গেলে রক্ত ঝরত নিশ্চিত। তাই তৃণমূল খেলা ছেড়ে দিয়েছে।
সত্যিটা যেমনই হোক, ভোটারদের একটা বড় অংশের ধারণা, অন্তত দু’টি ওয়ার্ডে তৃণমূল নিজেই চায়নি যে দলের প্রার্থী জিতুক। এঁদের এক জন অবস্থা আঁচ করে ফল ঘোষণার আগে ময়দান ছেড়ে সরে পড়েন। আর এক জন, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সিরাজুল শেখ অবশ্য ছিলেন শেষ পর্যন্ত। বারবার সাদা রুমালে ঘাম মুছে ভারী গলায় বলছিলেন, ‘‘যা হয়েছে, ভালই হয়েছে। আমাদের দল পুরসভায় জিতেছে, এটাই বড় কথা।’’ আর, তাঁর সামনেই গণনা কেন্দ্রের মধ্যে সৌমিকের ঘাড়ে হাত দিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বিজয়ী সিপিএম প্রার্থী রফিকুল ইসলাম।
কেন এমন হল?
তৃণমূলে ফিসফাস, ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেতে গিয়েই এমন হাল হয়েছে সিরাজুলের। দাদার উপরে দাদাগিরি করতে গিয়েছিলেন তিনি। রাজ্য থেকে আসা বড় নেতার সঙ্গেও নাকি বেশি আশনাই। সেটা দাদার নাপসন্দ। ৯ নম্বর ওয়ার্ডেও নাকি দাদার কাছের লোক না হওয়াতেই ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের তাজিমুদ্দিন খানের।
তবে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের ছবিটা আলাদা। সেখানে কংগ্রেসের দাপট যথেষ্ট। বিল্লাল হোসেন তাগড়া প্রার্থী। তৃণমূল বুঝেইছিল, সেখানে ঝাঁপাতে গেলে বড় শক্তিক্ষয় হবে, রক্তক্ষয়ও হবে। অনেকেরই মতে, নিজের কব্জির জোরে জোটের এক মাত্র এক জনই জয়ী হয়েছেন, তিনি বিল্লাল। অর্থাৎ, তৃণমূল দু’টো ‘হিট উইকেট’ নিজেই না করে দিলে দিনের শেষে ফলটা হয়তো ২০-১ হয়ে যেত।