বন্ধ রয়েছে র্যাম্প। মেডিক্যাল কলেজে তোলা নিজস্ব চিত্র।
ছিল র্যাম্প। হয়ে গিয়েছে ‘প্লাস্টার রুম’।
ফলে অগ্নিকাণ্ডের দু’দিন পরেও দরজা বন্ধ থাকায় র্যাম্প ঘুরে দেখা হল না রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব ও দমকলের ডিজি-র।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দল এসেছিল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তবে দোতলায় তালাবন্দি র্যাম্পের দরজায় ‘প্লাস্টার রুম’ লেখা দেখেই স্বাস্থ্য সচিব আর এস শুক্লা ও দমকলের ডিজি সঞ্জয় মুখোপ্যাধ্যায়দের ফিরে যেতে হয়েছে। তার আগে অবশ্য চাবির খোঁজে তালাবন্দি র্যাম্পের দরজার সামনে মিনিট পাঁচেক অপেক্ষা করে গোটা তদন্ত দল। তারপরেও চাবি না পেয়ে বিরক্ত হয়েই তাঁরা ফিরে যান।
প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না চাইলেও আড়ালে হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভাগ্যিস চাবি পাওয়া যায়নি। কারণ, তালা খোলা হলে ওঁরা সকলেই দেখতে পেতেন যে সেখানে র্যাম্পের বদলে রয়েছে প্লাস্টার রুম। ভিতরে রয়েছে প্লাস্টারের সরঞ্জাম, আলমারি, বেসিন-সহ অন্যান্য সরঞ্জাম।
শনিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দোতলায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ‘ভিআইপি রুমে’ আগুন ধরেছিল। সেই ঘরের পিছনেই রয়েছে র্যাম্প। ওই ঘর ও র্যাম্পে দোতলায় ওঠা-নামার প্রবেশদ্বারের মাঝখানে দেওয়াল তুলে দিয়ে বছর দু’য়েক আগে তৈরি করা হয়েছে অস্থি বিভাগের ‘প্লাস্টার রুম’। সেই ঘরের পশ্চিম দিকের দরজা দিয়ে র্যাম্প নেমে গিয়েছে একতলায়। দোতলার র্যাম্পের ওই অংশে ‘প্লাস্টার রুম’ করায় পশ্চিম দিক দিয়ে একতলায় নামার দু’টি দরজাই তালাবন্দি। র্যাম্পের ওই অংশের ‘প্লাস্টার রুম’-এ মঙ্গলবারেও রোগীদের ‘প্লাস্টার’ করানো হয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে, শনিবারের ঘটনার পরেও কি তাহলে শিক্ষা নিল না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ?
এ দিনও রোগী ও আয়াদের একাংশ অভিযোগ করেছেন, শনিবার অগ্নিকাণ্ডের সময় বিপন্ন মানুষ ও রোগীরা ওই র্যাম্প ব্যবহার করতে পারেননি। ফলে গোটা ভিড়টাই আছড়ে পড়েছিল সঙ্কীর্ণ সিঁড়ির উপরে। আর তাতেই পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের, জখম হয়েছেন ১৭ জন। তারপরেও টনক নড়েনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। সোমবারেও তদন্ত দলের র্যাম্প বন্ধ দেখে পেয়ে ফিরে যাওয়ার ঘটনায় ফের বেআব্রু হয়ে পড়ল হাসপাতালের অব্যবস্থা। এরপরেও র্যাম্পের ওই অংশ ‘প্লাস্টার রুম’ হিসাবে ব্যবহার করলে ভবিষ্যতেও আপৎকালীন সময়ে একই ঘটনা ঘটবে। যেমনটা ঘটেছিল গত শনিবারে।
আপৎকালীন সময়ে কিংবা জরুরি প্রয়োজনে রোগীদের ব্যবহারের জন্যই কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে ২০১২ সালে ওই র্যাম্প তৈরি হয়। বিদ্যুৎ বিভ্রাট বা অন্য কোনও কারণে ‘লিফট’ বন্ধ থাকলে রোগীর স্ট্রেচারে নিয়ে ওঠানামার জন্যই ওই ব্যবস্থা করা হয়। অথচ সেই প্রয়োজন বেমালুম ভুলে গিয়ে তৈরি হয়ে গিয়েছে ‘প্লাস্টার রুম’।
যদিও বিষয়টি মানতে নারাজ হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল এবং ডেপুটি সুপার প্রভাসচন্দ্র মৃধা। শনিবার সুহৃতাদেবী ছুটিতে থাকায় সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন প্রভাসবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘র্যাম্প ও দ্বিতীয় সিঁড়ি বন্ধ থাকার কথা ঠিক নয়। গুজব। সবটাই খোলা ছিল। এখনও খোলা আছে।’’ কিন্তু দ্বিতীয় সিঁড়ির দরজার ভাঙাচোরা দশা ও প্রত্যক্ষদর্শী আয়াদের বক্তব্যেই প্রমাণিত যে, অগ্নিকাণ্ডের পর জনতার ধাক্কায় সিঁড়ির দরজা ভেঙেছে।
তিন তলা থেকে র্যাম্পে নামার মরচে ধরা কোলাপসিবল গেট বন্ধ থাকতে দেখা গিয়েছে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত। দোতালায় র্যাম্পের প্রবেশদ্বার আটকে ‘প্লাস্টার রুম’ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে মঙ্গলবারও। অথচ সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ সুহৃতা পালও ‘প্লাস্টার রুম’ নিয়ে কথা বলতে চাননি। বরং ডেপুটি সুপারের সুরেই সুর মিলিয়ে তিনি বলছেন, ‘‘র্যাম্প আগেও খোলা ছিল। এখনও খোলাই আছে। তবে র্যাম্পে জমা রাখা বালি সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে পূর্ত দফতরকে।’’
র্যাম্প যদি খোলাই থাকে তাহলে সোমবার স্বাস্থ্য সচিব-সহ গোটা তদন্তকারী দলকে ঘুরে যেতে হল কেন?
সুহৃতাদেবীর সাফাই, ‘‘ওটা একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পূর্ত দফতরকে বলেছি, সব ঠিক করে দেবে।’’ যা শুনে হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কটাক্ষ, ‘‘ভুল নয়, র্যাম্প আটকে প্লাস্টার রুম করার মতো তুঘলকি কাণ্ড ঘটল কী ভাবে সেটারও তদন্ত হওয়া দরকার।’’