Coronavirus

কোভিড হোটেলে খরচের বিলে সন্দেহ

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়,  মে মাসে হোটেলে ১,২৭১ জন কর্মীর খাওয়া খরচ বাবদ জিএসটি-সহ ৮ লক্ষ ৪৭ হাজার ৪৩৯ টাকার বিল করা হয়েছে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার ও মনিরুল শেখ

কৃষ্ণনগর ও কল্যাণী  শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২০ ০৭:২৪
Share:

প্রতীকী ছবি

কল্যাণীর কার্নিভাল কোভিড হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও অন্য কর্মীদের থাকার জন্য প্রশাসনের নেওয়া হোটেলের বিল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ জেলা স্বাস্থ্য দফতরই। বিল আটকে দিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় নথি ও উপযুক্ত ব্যাখ্যা না পাওয়া পর্যন্ত যে টাকা মেটানো হবে না, জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তা-ও।

Advertisement

কার্নিভাল ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত মে মাসের জন্য ১৭ লক্ষ ৭৮ হাজার ৫৭৪ টাকার বিল পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের খাওয়া খরচ থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক বিল, কর্মীদের বেতন ও খাওয়া খরচ এবং জেনারেটরের তেলের খরচ রয়েছে। সেই বিল খতিয়ে দেখতে গিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের চোখে বেশ কিছু অনিয়ম ও অসঙ্গতি ধরা পড়ে। সেগুলি চিহ্নিত করে ‘নোটশিট’ দিয়ে উপযুক্ত ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, মে মাসে হোটেলে ১,২৭১ জন কর্মীর খাওয়া খরচ বাবদ জিএসটি-সহ ৮ লক্ষ ৪৭ হাজার ৪৩৯ টাকার বিল করা হয়েছে। কিন্তু ওই ১,২৭১ জন কারা, হোটেলে কবে কত জন ছিলেন তার কোনও 'রেজিস্টার' পাঠানো হয়নি। প্রতি দিনের খাওয়া খরচ বাবদ মাথাপিছু যে টাকা দেখানো হয়েছে তা নিয়েও আপত্তি রয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। কেননা এই হিসেবে দৈনিক মাথাপিছু গড়়ে প্রায় ৬৬৭ টকা খরচ হয়েছে। অথচ রাজ্য সরকারের নির্দেশে রোগীদের পাশাপাশি অন্যদেরও দৈনিক খাওয়া খরচ বাবদ দেড়শো টাকা ধরা হচ্ছে, তার বেশি দেওয়া সম্ভব না।

Advertisement

হোটেলের জেনারেটরের জন্য ডিজেলের খরচ হিসাবে যে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৭৬৮ টাকার বিল পাঠানো হয়েছে তাতেও অসঙ্গতি খুঁজে পাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। বিলে জানানো হয়েছে, ওই টাকায় ২,৩৭৬ লিটার তেল কেনা হয়েছে। আমপান ঝড়ের পরে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণেই অত জেনারেটর চালাতে হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। আমপান এসেছিল ২০ মে সন্ধ্যায়। অথচ ১ মে থেকেই জেনারেটরের জন্য বিপুল পরিমাণ ডিজেল কেনার কথা জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের প্রশ্ন, ঝড় এল ২০ মে আর সেই বিপর্যয়ের জন্য ১ মে থেকে তেল কেনা শুরু হয়ে গেল? এক কর্তার কথায়, "ওই হোটেলের এপ্রিল মাসের বিদ্যুতের বিল হয়েছে ২ লক্ষ ৫ হাজার ৭১৬ টাকা। তা হলে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে তাদের বিদ্যুৎ বিল গড়ে দু’লক্ষ টাকার আশপাশেই থাকে। মে মাসেও বিল এসেছে প্রায় ২ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ আগের মাসের চেয়েও প্রায় ২8 হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহে মোটেই তেমন ঘাটতি হয়নি। তার পরেও কী ভাবে জেনারেটরের অত তেল লাগল?"

সাধারণত লোডশেডিং বা কম ভোল্টেজের ক্ষেত্রেই হোটেলে জেনারেটর চালানোর কথা। আমপানের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে খুব বেশি হলে তিন-চার দিন সময় লেগেছে। তা হলে ৩১ মে পর্যন্তই বা কেন এত জেনারটর চালিয়ে যেতে হল, সেই প্রশ্নও তাঁরা তুলছেন। জেনারেটর চালানোর যে নথি রাখা হয়, সেই ‘লগবুক’ও বিলের সঙ্গে পাঠানো হয়নি বলে জেনা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

জেলা প্রাশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই হোটেলটি যেহেতু জেলা প্রশাসন নিয়েছে তাই জেএনএম হাসপাতালের সুপার ও কল্যাণী মহকুমাশাসকের হাত ঘুরে এসেছে এই বিল। তা সত্ত্বেও এত অসঙ্গতি কেন? কল্যাণী মহকুমাশাসক ধীমান বারুইয়ের দাবি, ‘‘বিল নিয়ে কোনও অসঙ্গতির কথা স্বাস্থ্য দফতর নোটশিটে উল্লেখ করেনি। আমাদের থেকে কিছু নথি চাওয়া হয়েছিল, সেগুলি সব জমাও দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে এখন আর কোনও সমস্যা নেই।’’ জেএনএম হাসপাতালের সুপার অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে একাধিক বার ফোন এবং মেসেজ করা হলেও তিনি কোনও জবাব দেননি। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমরা বিষয়টি দেখছি। এই মুহূর্তে কোনও মন্তব্য করব না।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন