জলকষ্ট কবে মিটবে, জানতে চায় বড়ঞা

বছর দশেক আগেও দিনে তিন বার বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ হত। এক দশকে সেই পরিষেবা কার্যত তলানিতে ঠেকায় ফুঁসছেন এলাকার বাসিন্দারা। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের (পিএইচই) কর্তাদের দাবি মুর্শিদাবাদ জেলাজুড়ে প্রায় ১৮টি পিএইচই-র পাইপ লাইন মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ দিকে, ভরা বর্ষায় পানীয় জলের অভাবে বিপাকে পড়ছেন বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কান্দি শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৫ ০১:২৭
Share:

বিকল নলকূপ। বড়ঞায়। ছবি: কৌশিক সাহা।

বছর দশেক আগেও দিনে তিন বার বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ হত। এক দশকে সেই পরিষেবা কার্যত তলানিতে ঠেকায় ফুঁসছেন এলাকার বাসিন্দারা। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের (পিএইচই) কর্তাদের দাবি মুর্শিদাবাদ জেলাজুড়ে প্রায় ১৮টি পিএইচই-র পাইপ লাইন মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ দিকে, ভরা বর্ষায় পানীয় জলের অভাবে বিপাকে পড়ছেন বাসিন্দারা।

Advertisement

যেমন বড়ঞা ব্লক। এই ব্লকের বড়ঞা, পাঁচথুপি ও সাটিতারা তিনটি পিএইচই-র ট্যাঙ্কের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। সম্প্রতি সাটিতারা পিএইচই পাম্পটি মেরামত করে পানীয় জল সরবরাহ কিছুটা হলেও উন্নত হয়েছে। কিন্তু বড়ঞা ও পাঁচথুপির অবস্থা এতটাই খারাপ যে অধিকাংশ ট্যাপ কল দিয়ে জল সরবরাহ হয় না। যে গুলি থেকে এখনও জল বের হচ্ছে সে গুলিতে পানীয় জল তো দূর, রীতিমতো নোংরা জল বের হচ্ছে। এমন অবস্থায় আতান্তরে পড়েছেন ওই দু’গ্রামের বাসিন্দারা।

বড়ঞা পাম্পটি ১৯৮৫ সালে তৈরি হয়েছে। তখন দিনে তিনবার সকাল, দুপুর ও বিকালে জল সরবরাহ করত পিএইচই। বড়ঞা ছাড়াও গোপীপুর, ববরপুর, গৌরীনগর, মসড্ডা গ্রামগুলিতে জল সরবরাহ হত। অভিযোগ, এক দশক ধরে ওই সব গ্রামগুলিতে ট্যাপের সংযোগ থাকলেও সব কল দিয়ে জল বের হয় না। কোনও কল দিয়ে জল বের হচ্ছে না, তো কোনও কল দিয়ে নোংরা জল বের হচ্ছে কেন? পিএইচই-র এক কর্মী জানালেন, ট্রাঙ্কে একটি নেট থাকে। সেই নেটটি জল পরিশ্রুতকরণের কাজ করে। কিন্তু, সেটা কয়েক বছর ধরে ভেঙে পড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বহুবার দফতরের কর্তাদের জানিয়েছি কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।’’

Advertisement

জল নিয়ে অভিযোগ রয়েছে আরও। কেমন? ভুক্তভোগীরা জানালেন, সারা দিনে কখন যে জল আসবে তা কেউ বলতে পারে না! এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘কোনও সময় দিনভর জল পড়ে যায়। কখনও সারা দিনে জলের দেখা মেলে না।’’ এই পরিস্থিতিতে গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে জল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা। কেউবা নিজের খরচে নলকূপ তৈরি করছে। যাঁদের সে ক্ষমতা নেই, তাঁরা প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে জল এনে দিন গুজরান করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজ শেখ ও দিবাকর মণ্ডল বলেন, “এক দিন দু’দিন নয়, দশ বছর ধরে এলাকায় জলের সঙ্কট চলছে অথচ তা নিয়ে কারও কোনও হেলদোল নেই। ভোটের সময় ভোট জলের সমস্যার সমাধানে হাজারো প্রতিশ্রুতি শোনা যায়। পরে ভোট ফুরোলে যে কে সেই!” পানীয় জলের সঙ্কটের কথা স্বীকার করে বড়ঞা ব্লকের বিডিও বাদশা ঘোষালের আশ্বাস, এলাকায় নলকূপগুলি দ্রুত মেরামতির ব্যবস্থা করব।’’ তাঁর কথায়, ইতিমধ্যেই পিএইচই ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

পিএইচই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার অধিকাংশ পাম্প হয়েছিল আশির দশকে। দীর্ঘ দিন মেরামতির অভাবে পাম্প ও পাইপলাইনগুলি খারাপ হয়ে গিয়েছে। এক কর্তা জানাচেছন, সব পাল্টাতে পারলে তবেই আগের মতো জল সরবরাহ করা যাবে। মুর্শিদাবাদের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিক শম্ভুদাস প্রামাণিক বলেন, “বড়ঞা, পাঁচথুপি, ভরতপুর, মহালন্দি, গোকর্ণ, দক্ষিণখণ্ডের মতো ১৮টি পাম্পের অবস্থা খুব খারাপ। সেগুলি সংস্কার করে জল সরবরাহ ঠিক করতে আমরা উদ্যোগী হয়েছি। অর্থ বরাদ্দ হলেই কাজ শুরু হবে।’’ বড়ঞায় নোংরা জল বের হওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

বড়ঞার বিধায়ক কংগ্রেসের প্রতিমা রজক বলেন, “শুনছি পুজোর আগেই অর্থ বরাদ্দ হবে। তখন আর জল কষ্ট থাকবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন