সাজছি-মোরা: ইদের আহ্লাদে। শুক্রবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
জিএসটিতে রক্ষা নেই, দোসর পাটের বাজার!
আর এই জোড়া ফলায় বিদ্ধ হল ইদুজ্জোহার বাজার। হতাশ ব্যবসায়ীরা জানান, নানা কারণে এর আগেও বাজার খারাপ গিয়েছে। কিন্তু এ বারের ধাক্কা সামলাতে বেশ বেগ পেতে হবে।
নদিয়া-মুর্শিদাবাদে ইদুজ্জোহা ও পুজোর বাজার অনেকটাই নির্ভর করে পাটের দাম ও ভিনরাজ্য কাজ করা শ্রমিকদের উপরে। এ বার বাইরে থাকা লোকজন সে ভাবে বাড়ি ফেরেননি। পাটের বাজারও ভাল নয়। বহু এলাকায় পাট এখনও জমিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বৃষ্টির কারণে আনাজেও লোকসান হয়েছে চাষির। ব্যবসায়ীদের দাবি, এই সব কারণেই এ বার ইদুজ্জোহার বাজার মন্দা। করিমপুরের এক বস্ত্রব্যবসায়ী বিমান মণ্ডলের কথায়, ‘‘নোট বাতিলের পরে বাজারে প্রভাব পড়েছিল। সেই ঝক্কি কাটিয়ে ইদ-উল-ফিতরে ভাল বিকিকিনি হয়েছিল। ইদুজ্জোহার বাজার একেবারেই জমল না। সামনে পুজোর বাজারেও যে কী হবে, বুঝতে পারছি না।’’ রামনগরের গুল মহম্মদ, থানারপাড়ার আখতারুল মল্লিকেরা বলছেন, ‘‘এ বারে বৃষ্টিতে মাঠের বেশিরভাগ আনাজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পাটের বাজারও খারাপ। বহু চাষির পাট এখনও খেতেই পড়ে রয়েছে। ফলে আমরাও হাত খুলে বাজার করতে পারলাম না।’’ ভগবানগোলার বস্ত্র ব্যবসায়ী তারিফ মহলদার জানান, তাঁদের বেচাকেনা নির্ভর করে বাইরে থাকা শ্রমিকদের উপরে। প্রতি বছর নিয়ম করে তাঁরা পরবের আগে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু নোট বাতিল ও পরে জিএসটির গুঁতোয় বহু ঠিকাদার সংস্থা শ্রমিকদের সময় মতো টাকা দিতে পারেনি। এ বছর বহু শ্রমিক বাড়িও ফেরেননি। তার একটা নেতিবাচক প্রভাব তো বাজারে পড়েইছে। একই বক্তব্য কান্দি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তারকনাথ প্রামাণিকেরও। খুলারপুকুর গ্রামের শিরিনা বিবি বলেন, ‘‘স্বামী ওডিশায় রঙের কাজ করেন। ইদুজ্জোহায় বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু যে ঠিকাদারের অধীনে কাজ করে, তিনি টাকা দিতে পারেননি। ফলে বাড়িতে আসা তো দূরের কথা, টাকাও পাঠাতে পারেনি। পরবের সময় ছোট দুই ছেলের পোশাক পর্যন্ত কিনতে পারলাম না।’’
ডোমকল মহকুমা চেম্বার অফ কমার্স সম্পাদক শঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘নোট বাতিলের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে জিএসটি-র ধাক্কা। অন্য বছর পরবের ১৫ দিন আগে থেকে ভিড় সামলানো যায় না। এ বছর দোকান খোলা রয়েছে। ক্রেতাদের দেখা নেই।’’ ভগবানগোলা লিচু বাজার এলাকার ব্যবসায়ী অমিতকুমার সাহা জানান, ভগবানগোলা ১ ও ২ ব্লকের পাশাপাশি লালগোলা, সাগরদিঘি থেকে প্রতি বছর পরবের আগে কেনাকাটা করতে আসেন মানুষ। এ বছর তাঁদের দেখা মেলেনি। তবে জিএসটি, পাটের বাজারের পাশাপাশি অনলাইনে কেনাকাটার কারণকে দায়ী করছেন অমিত। তাঁর কথায়, ‘‘আগের চেয়ে অন-লাইন কেনাকাটা বেড়েছে। ফলে এক শ্রেণির ক্রেতা এখন বাড়িতে বসেই বাজার করছেন।’’
চাকদহের কাপড়ের হাটেও হাহাকার। প্রতি শুক্রবার এই হাট বসে। ইদুজ্জোহার আগের দিন প্রত্যাশা নিয়েই এসেছিলেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। কিন্তু বেলাশেষে মুখ ভার করেই বাড়ি ফিরলেন সবাই। চাকদহের রাউতাড়ির বাসিন্দা মমতাজ বিবি বলেন, “এখানে অনেক কম দামে জিনিস পাওয়া যায় বলে এসেছিলাম। কিন্তু দাম কম কোথায়? সকলেই বলছেন, জিএসটির কারণে নাকি দাম বেড়ে গিয়েছে।”