গ্রামে ফিরল আব্দুলের দেহ। বৃহস্পতিবার। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
মৃত্যুই যেন তাঁকে টেনে নামিয়েছিল বেসরকারি বাস থেকে!
বসার জায়গা পেয়ে গেলে পরের বাসে চড়ার প্রশ্নই ছিল না। কিন্তু দু’টো স্টপ পেরিয়ে গেলেও বেসরকারি বাসের খালাসি তাঁর জন্য বসার ব্যবস্থা করতে পারেননি। পায়ের ব্যথায় আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি মেহেদিপাড়া গ্রামের হাজি আব্দুল মালেক। নেমে পড়েছিলেন। প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল সরকারি বাস। বসার জায়গাও মিলেছিল, কিন্তু সেই যাত্রা শেষ হয়েছিল ভাণ্ডারদহ বিলের জলের গহনে। তিন দিন পরে মৃতদেহ ভেসে ওঠে তাঁর।
গ্রামের মসজিদে ইমাম ছিলেন আব্দুল মালেক। ‘হাজি সাহেব’ নামেই পরিচিত ছিলেন সকলের কাছে। পরিবার সূত্রের খবর, জমিজমার কাগজপত্র নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল তাঁর। তা মেটাতে বহরমপুর রেজিস্ট্রি অফিসে যাচ্ছিলেন। তাড়াতাড়ি সেখানে পৌঁছতে হবে বলে ভোরে ফজরের নমাজ সেরে মেহেদিপাড়া মোড় থেকে খয়রামারী-বহরমপুর রুটের একটি বেসরকারী বাসে উঠেছিলেন। ওঠার সময় গাড়ির খালাসি পরের স্টপ হাড়ুরপাড়ায় থেকে আসনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা শেষপর্যন্ত করে দিতে পারেননি। বাড়ির লোকেরা জানিয়েছেন, শারীরিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন বেশ কিছুদিন ধরে। পায়ের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন। তাই দাঁড়িয়ে এতটা রাস্তা যাওয়ার ঝুঁকি নিতে পারেননি। বিরক্ত হয়েই মাঝপথে বাস থেকে নেমে পড়েছিলেন বছর বাষট্টির ইমামসাহেব। তুলনায় ফাঁকা একটা সরকারি বাস পেয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বসার জায়গা পেয়ে অনেকটা নিশ্চিন্তও হয়েছিলেন। বুঝতে পারেননি এরপর চিরকালের মতো মরণঘুমে আচ্ছন্ন হতে হবে।
আফশোস এখনও কাটছে না আত্মীয়দের। ওই বাসেই যে তার শেষ যাত্রা হবে সেটা কে জানত! তাঁর ছেলে জেমিয়ার রহমানের কথায়, ‘‘বাস দুর্ঘটনার খবর শুনে আব্বার ফোনে বার-বার ফোন করি। কিন্তু কোনও সাড়া না পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। মাঝপথে বহরমপুর থেকে ফিরতি বেসরকারী বাসের খালাসিকে আব্বার ছবি দেখালে তিনি বলেন, আব্বা তাঁদের গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে পিছনে থাকা সরকারি বাসে উঠেছিলেন। শুনেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।’’ আক্ষেপ গোটা মেহেদিপাড়ার। হাজিসাহেবের ‘জানাজা’য় চোখের জলে ভেসে সামিল হয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ।