প্রার্থী ঘরনি, ঘুম উবেছে বিধায়কের

বিধানসভার ভোট নয়, পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে উপনির্বাচন। ওই আসনের প্রার্থীকে জেতাতে ঘুম উবেছে সুতির বিধায়কের! বৃহস্পতিবার বিকেলে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচার শেষ হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

অরঙ্গাবাদ শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৫ ০১:০৯
Share:

বিধানসভার ভোট নয়, পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে উপনির্বাচন। ওই আসনের প্রার্থীকে জেতাতে ঘুম উবেছে সুতির বিধায়কের!

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিকেলে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচার শেষ হয়েছে। কিন্তু, শুক্রবার দুপুরেও বাড়িতে, অফিসে সমর্থকদের অবিরাম যাতায়াত চলছে। কখনও শশব্যস্ত হয়ে এলাকায় গিয়ে, কখনও টেলিফোনে খোঁজ নিচ্ছেন পরিস্থিতির। উপনির্বাচন নিয়ে বিধায়কের এত মাথ্যাব্যথা কেন? কর্মীরা সম্বস্বরে জানালেন, ‘‘হবে না! প্রার্থী যে খোদ স্ত্রী!’’ মাঝে এক কর্মীর আবার টিপ্পনি, ‘‘বুঝছেন না! জেতাতে না পারলে ঘরে-বাইরে মুখ পুড়বে যা!’’

সুতির মহেশাইলে ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ইমানি বিশ্বাসের স্ত্রী সাহানাজ বিবি। আজ, শনিবার ওই আসনে উপনির্বাচন। স্ত্রী প্রার্থী হলেও বকলমে প্রার্থী যে তিনিই তা মানছেন সাহানাজও। তাই এই নির্বাচনে দলের সম্মানের পাশাপশি নিজের সম্মানও সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কংগ্রেস থেকে দল বদলের পর এই নির্বাচন তাঁর কাছে বিরাট চ্যালে়ঞ্জের।

Advertisement

সাহানাজ এর আগে রাজনীতির ময়দানে পা রাখেননি। ঘরকন্নাতেই ব্যস্ত থাকতেন। তাই হঠাৎ ঘর ছেড়ে বাইরে কেন? সেই প্রশ্ন করতে মুচকি হাসেন সাহানাজ। তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনে নামার কথা ছিল না। কিন্তু কর্মীদের বারংবার অনুরোধে না বলতে পারিনি। তাছাড়া স্বামীর সম্মানের লড়াই এই নির্বাচন। তাই রাজি হয়ে গেলাম।’’ নিজের জয় সম্পর্কেও ষোলো আনা নিশ্চিত তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘৪৬৬৪ জন ভোটারকে নিয়ে ছয়টি বুথের ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন রয়েছে এই নির্বাচনী এলাকার মধ্যে। এর সবক’টি তৃণমূলের দখলে। তাই জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।’’

এক সময় ওই এলাকা বামেদের ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত ছিল। একদা বাম দুর্গেই নির্বাচনের আগের দিনও কোথাও বামেদের অস্তিত্ব নেই। এসইউসি ও এক নির্দলের কয়েক’টি দেওয়াল লিখন চোখে পড়লেও ইমানির লড়াইয়ে ধর্তব্যের মধ্যেই নেই তাঁরা। তা হলে ইমানির লড়াইটা কার সঙ্গে? ‘‘তাঁর নিজের সঙ্গেই’’—বলছেন কংগ্রেস প্রার্থী হুমায়ুন কবীর। তাঁর কথায়, ‘‘সুতির জন্য গত সাড়ে ৪ বছর ইমানি কী করেছেন সেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। তাতে ভয় পাচ্ছেন তিনি।’’ বামেদের ঘাঁটিতে বামেরা নেই। পুরনো তৃণমূলীরা এক জোট হয়ে লড়ছে ইমানির বিরুদ্ধে। আরএসপি-র জেলা নেতা জানে আলম মিয়া বলেন, ‘‘সন্ত্রাসের ভয়েই প্রচারে নেই দলের প্রার্থী। তবে বিদ্রোহে বাম ভোট কংগ্রেস পাবে বলে বিশ্বাস করি না।’’

ইমানি অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন বিদ্রোহের আশঙ্কা। তিনি বলেন, ‘‘উপনির্বাচন হলেও ৯০ শতাংশের উপর ভোট পড়বে এই আসনে। বিরোধীরা বড়জোর ৩০ শতাংশ ভোট পাবে। জিতব আমরাই।’’

ইমানির এই হিসেব শুনে মুচকি হেসে হক কথাটা অবশ্য শুনিয়েছেন পারুলিয়া গ্রামের এক মুদি দোকানি। তাঁর কথায়, ‘‘সাহানাজ বা হুমায়ুন কবীর কোনও ফ্যাক্টরই নয়। আসল লড়াইটা তো তৃণমূলের অন্দরেই। বিধানসভায় দু’পক্ষই চাইছে দু’পক্ষকে আটকাতে। সুতির এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে আজ তারই মহড়া।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন