বিতর্কিত ছবিতে বিড়ম্বিত বিজেপি

সোশ্যাল মিডিয়ায় গত সোমবার একাধিক ছবি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বিজেপি-র নবদ্বীপ শহর দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতি শিবশঙ্কর মণ্ডলের সঙ্গে নবদ্বীপ গ্রামীণ মণ্ডলের মহিলা মোর্চার এক নেত্রীকে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:০২
Share:

প্রতীকী ছবি।

সদ্য করিমপুর উপ-নির্বাচনে হারের ক্ষত এখনও দগদগে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্রমাগত বাড়তে থাকা গোষ্ঠীবিবাদ। নদিয়ায় বিজেপি নেতৃত্ব যখন এমন একাধিক সমস্যায় জর্জরিত ঠিক তখনই তাদের সামনে এক অপ্রত্যাশিত জটিলতার উদয় হয়েছে!

Advertisement

সোশ্যাল মিডিয়ায় গত সোমবার একাধিক ছবি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বিজেপি-র নবদ্বীপ শহর দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতি শিবশঙ্কর মণ্ডলের সঙ্গে নবদ্বীপ গ্রামীণ মণ্ডলের মহিলা মোর্চার এক নেত্রীকে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা গিয়েছে। ফেসবুকে ছবিগুলি পোস্ট হওয়ার পরেই জেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।

যদিও ওই মণ্ডল সভাপতি দাবি করেন, প্রযুক্তির কারিকুরিতে ছবিটি তৈরি করা হয়েছে তাঁকে বিপদে ফেলতে, এবং এর বিরুদ্ধে তিনি কৃষ্ণনগর সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন। কিন্তু তাতে বিজেপির অস্বস্তি কাটেনি। অগত্যা অবস্থা সামাল দিতে ওই মণ্ডল সভাপতিকে তড়িঘড়ি শো কজ করেন বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মহাদেব সরকার। সোমবার রাতেই নবদ্বীপ শহর দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শিবশঙ্কর বাবু। গভীর রাতে তিনি পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন জেলা সভাপতিকে এবং দলের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার ডিআরও মনোজকুমার পাণ্ডের কাছে। দল সূত্রের খবর, তাঁকে এবং তাঁর সঙ্গে ছবিতে যে নেত্রীকে দেখা গিয়েছে তাঁকেও দলের যাবতীয় দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

রাজনৈতিক সূত্রের খবর, ছবি-বিতর্ক বিজেপি-র অন্তর্কলহেরই ফল। করিমপুরে হারের পর মহাদেব-বিরোধী গোষ্ঠী অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মহাদেবের বিরুদ্ধে সরাসরি উপ-নির্বাচনে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ এনে উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদে বদল আনতে তারা মরিয়া।

অন্য দিকে, ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে পুরভোটের মুখে জেলায় ৩৩টির মধ্যে ১৪টি মণ্ডলে সভাপতি পরিবর্তন করে মহাদেব নিজের ঘনিষ্ঠদের বসিয়েছেন বলে দল সূত্রে খবর। যাঁর ছবি নিয়ে বিতর্ক সেই শিবশঙ্কর মণ্ডলও মহাদেবের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। মাত্র কিছু দিন আগে, গত ৫ ডিসেম্বর তাঁকে তিন বছরের জন্য নবদ্বীপ দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। মহাদেবকে বিপাকে ফেলতেই তাই অন্যতম সঙ্গীকে দলেরই বিরোধী গোষ্ঠী ফাঁসিয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে।

শিবশঙ্করবাবু যেমন বলেছেন,“আমার একার একটি সেল্ফি তোলা ছিল। অনেক সময় মঞ্চে ভাষণ দেওয়ার সময় পরিচিত কারও হাতে ফোন দিয়ে যাই। হয়তো সেই সময়ে ছবিটি অন্য কোনও মোবাইলে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার পর প্রযুক্তির সঙ্গে অন্য কারও মুখ সেই ছবিতে জুড়ে আমার সম্মানহানির চেষ্টা হয়েছে।’’ যার অর্থ, খুব কাছের কেউ এই কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। কারণ, খুব কাছের বা বিশ্বস্ত কেউ না হলে তাঁর কাছে রাজনৈতিক নেতারা কেউ সচরাচর নিজের ব্যক্তিগত ফোন ছেড়ে যান না।

মহাদেব সরকারও বলেন, “সোমবার সকাল ন’টা নাগাদ প্রথম বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হয়। আমি তখনই ওই মণ্ডল সভাপতিকে শোকজ করি। শিবশঙ্কর তাঁর পদত্যাগ পত্রে জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি তাঁর বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।’’

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইঙ্গিত দিয়ে শিবশঙ্করের মন্তব্য, “আমাকে সদ্য নবদ্বীপের দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছিল। এটা যারা মেনে নিতে পারেনি তারাই এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন