কথা ছিল, এ বার থেকে ওঁরাই ইংরেজি শিখবে। একেবারে প্রথম শ্রেণি থেকে। ওঁরা মানে প্রত্যন্ত গ্রামের পিছিয়ে পড়া পড়ুয়ারা। রাজ্যের কয়েকটি জেলায় ইংরেজি মাধ্যমের হাই মাদ্রাসা তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিল বাম সরকার। তৃণমূল ক্ষমতায় এসেই সেগুলি চালু করে। ঠিক হয়, প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ওই মাদ্রাসাগুলিতে পড়াশোনা হবে ইংরেজি মাধ্যমে। পড়ুয়াদের থাকার জন্য হস্টেলও তৈরি হয়। সেই অনুযায়ী ন’টি মাদ্রাসা চলছে।
কিন্তু বছর তিনেক পরেও ওই মাদ্রাসাগুলিতে স্থায়ী শিক্ষকই নিয়োগ করতে পারল না রাজ্য। ফলে সেগুলিতে এখন কেবলমাত্র প্রাথমিকের দু’টি শ্রেণি চালু করা গিয়েছে। চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের দিয়ে চলছে মাদ্রাসাগুলির পঠন-পাঠন। ফলে গ্রামের শিক্ষার্থীদের নিখরচায় ইংরেজি শেখার সুযোগ মাঠে মারা যেতে বসেছে।
রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের অধিকর্তা আবিদ হোসেন জানাচ্ছেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে মাদ্রাসাগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ হবে। ইতিমধ্যে সে প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে।
তবে ঠিক কবে নতুন শিক্ষক আসবেন সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারছেন না দফতরের কোনও আধিকারিকই।
আর এর ফলে ভুগতে হচ্ছে ওই সব মাদ্রাসার পড়ুয়াদের। কৃষ্ণনগরের পানিনালাতে রয়েছে নদিয়ার একমাত্র ইংরেজি মাধ্যম সরকারি মাদ্রাসা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই সরকারি মাদ্রাসার উদ্বোধন করেন। সেখানে রয়েছেন ন’জন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক। কিন্তু শিক্ষকের অভাবে সেখানে কেবলমাত্র ‘ইউকেজি’-তেই ভর্তি নিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। ছাত্র সংখ্যা ৩৩০। সিংহাটির এক অভিভাবক আদের আলি বলেন, ‘‘ছেলে ওখানে পড়ে। স্থায়ী শিক্ষক না থাকায় সমস্যা হচ্ছে।’’
অনেক অভিভাবকই ওই মাদ্রাসায় তাঁদের সন্তানকে ভর্তিই করতে চাইছেন না। পাছে, তাঁর সন্তান শিক্ষার গুণগত মান থেকে বঞ্চিত হয়। করিমপুরের বাসিন্দা রফিকুল শেখ যেমন জানাচ্ছেন, তাঁর ছেলে স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। সেখানে পড়াশোনার জন্য বছরে বিস্তর খরচ হয়। ভেবেছিলেন, পানিনালার ওই মাদ্রাসায় ছেলেকে ভর্তি করাবেন। কারণ, সেখানে টিউশন ফি নামমাত্র। কিন্তু স্থায়ী শিক্ষক না থাকায় তিনি ছেলেকে সেখানে ভর্তি করানোর ঝুঁকি নিতে নারাজ।
একই অবস্থা সংখ্যালঘু প্রধান মুর্শিদাবাদের হাই মাদ্রাসাতেও। বহরমপুরের বানজেটিয়াতে বছর কয়েক আগে তৈরি হয় ইংরেজি মাধ্যমের হাই মাদ্রাসা। কিন্তু সেখানেও কোনও স্থায়ী শিক্ষককে নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। মাস কয়েক আগে তো চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকেরা বেতন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। শেষমেশ জেলা প্রশাসন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে অস্থায়ী ভাবে ওই মাদ্রাসার পঠন-পাঠন চালানোর ভার দিয়েছে। এই অবস্থায় জলঙ্গির কুতুবুদ্দিন শেখ বলছেন, ‘‘ওখানে পুরোদমে পঠন-পাঠন শুরু হলে মেয়েকে ভর্তি করতাম। কিন্তু এই টালমাটাল অবস্থায় তা করতে সাহস পাচ্ছি না।’’