চব্বিশ ঘণ্টা পার, অন্ধকারেই পুলিশ

গির্জার ভিতরে খুনের ঘটনার কোনও কিনারা করতে পারল না পুলিশ। ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনও অন্ধকারে কিছু সূত্র হাতড়াচ্ছে। তবে প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, নিহত বিশ্বজিৎ পাল যে ব্যক্তির সঙ্গে বাড়ি ছাড়েন সেই ব্যক্তি এই খুনের পিছনে রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৯
Share:

ঘটনাস্থলে তদন্তকারীরা। নিজস্ব চিত্র

গির্জার ভিতরে খুনের ঘটনার কোনও কিনারা করতে পারল না পুলিশ। ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনও অন্ধকারে কিছু সূত্র হাতড়াচ্ছে।

Advertisement

তবে প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, নিহত বিশ্বজিৎ পাল যে ব্যক্তির সঙ্গে বাড়ি ছাড়েন সেই ব্যক্তি এই খুনের পিছনে রয়েছে। তার পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। কারণ, ঘটনার পর থেকে বেপাত্তা তন্ময় সাহা নামে ওই যুবক। সবচাইতে বড় কথা হল, ঘটনার পর থেকে তার মোবাইলের সুইচ বন্ধ। তদন্তকারীদের দাবি, যদি ওই যুবক খুনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত না থাকে তাহলে কেন মোবাইল বন্ধ করে করে বেপাত্তা হয়ে যাবে। সব চাইতে বড় কথা ওই যুবক বিশ্বজিতবাবু ও তার পরিবারকে যে ঠিকানা দিয়েছিল তা ভুয়ো বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। ওই ঠিকানায় তন্ময় সাহা নামে কোনও যুবকের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

বিশ্বজিতবাবুর মোটরবাইকেরও কোন খোঁজ মেলেনি। মনে করা হচ্ছে, খুনি সেই মোটরবাইক নিয়ে চম্পট দিয়েছে। আর এক্ষেত্রে ওই যুবকের পক্ষে সেটা করার সম্ভাবনাই বেশি। তবে ঠিক কী কারণে তাঁকে খুন করা হল, তা এখনও পরিষ্কার নয় পুলিশের কাছে। দেহ পরীক্ষা করার পরে পুলিশ এক প্রকার নিশ্চিত যে, একজনের পক্ষে এই খুন করা সম্ভব নয়। কারণ, শ্বাসনালীর দু’দিকে দু’বার আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আর এটা একজনের পক্ষে কোনওভাবেই সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। আর চার্চে যাতায়াত না থাকলে বাইরের কারও পক্ষে কোনওভাবেই জানা সম্ভব নয় যে, রাতে ওই ফটক ভেজানো থাকে। শুধু তাই নয়, ঘোরানো গেট থাকায় কাউকে জোর করে ভিতরে ঢোকানো সম্ভব নয়।

Advertisement

সেই কারণে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারনা, স্থানীয় কেউ এই ঘটনার সঙ্গে শুধু যুক্তই নয়, নিহত বিশ্বজিৎ পালের ঘনিষ্ট। কারণ, বিশ্বস্ত না হলে কোনওভাবেই তিনি রাতে নির্জন চার্চের ভিতরে ঢুকতেন না। শুধু তাই নয়, তাঁকে খুন করা হয়েছে চার্চের এক কোনে। খুব বিশ্বস্ত না হলে সেখানে কারও পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। ফলে পুলিশ মনে করছে, তন্ময় সাহার সঙ্গে স্থানীয় এক বা একাধিক ব্যক্তি ওই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে পুলিশ তাদের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করছে।

প্রথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, মহিলা ঘটিত কোনও কারণে তাঁকে খুন করা হতে পারে। বিশ্বজিতবাবুর সঙ্গে যে মহিলার সম্পর্ক ছিল, তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। পাশাপাশি পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রায় দিনই মদ্যপ অবস্থায় রাতে বাড়ি ফিরতেন বিশ্বজিতবাবু। রাতে মদ খাইয়ে কোনওভাবে গির্জার ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানেই খুন করে তাঁরই মোটরবাইক নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।

দু’দিন পার হওয়ার পরও পুলিশ কেন অপরাধীদের গ্রেফতার করতে পারল না? জেলার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “তদন্তে বেশ কিছু বিষয় উঠে আসছে। আমরা সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখছি। দ্রুত অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পারব।” তবে জেলা পুলিশের কর্তাদের কথায়, ‘‘জগদ্ধাত্রী পুজোর কারণে কৃষ্ণনগরে জেলার অনেক পুলিশ অফিসার ব্যস্ত থাকায় তদন্তের গতি কিছুটা স্লথ।’’

মঙ্গলবার বিকেলে জালালখালির গির্জায় তদন্তে এসেছিল ফরেন্সিক দল। তাঁরা ঘটনাস্থল খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন। সংগ্রহ করেন নানা করম নমুনা। সেই সঙ্গে পুলিশকে নিহতের পোশাক, হেলমেট, ছুরি, মৃতদেহের ও মাটিতে মিশে থাকা রক্তের নমুনা, ঘটনাস্থলের রক্তমাখা ও রক্ত না মাখা মাটি, ভিসেরা ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট চেয়েছে ফরেন্সিক দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন