পিছু ছাড়ল না ফোন!

ঠিক এক বছর আগে, করিমপুর থেকে মালদহ যাওয়ার মুখে এক ঝলক বহরমপুর ছুঁয়ে যাওয়া  বাসটি যখন ভাণ্ডারদহ বিলে হারিয়ে গেল, তখনও কুয়াশা ছিল, ছিল তীব্র গতি, চালকের কানে ছিল ফোন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দৌলতাবাদ শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৩
Share:

কার কথা কে শোনে! মোবাইল কানেই গাড়ি চালাচ্ছেন ওঁরা। নিজস্ব চিত্র

বেলার দিকে কুয়াশা একটু ফিকে হয়ে এলে, ক্রেনের দাঁতে যখন তাকে গেঁথে ফেলা গেল, ভাণ্ডারদহ বিলের কালো জলে সে তখন নিথর নীল।

Advertisement

ঠিক এক বছর আগে, করিমপুর থেকে মালদহ যাওয়ার মুখে এক ঝলক বহরমপুর ছুঁয়ে যাওয়া বাসটি যখন ভাণ্ডারদহ বিলে হারিয়ে গেল, তখনও কুয়াশা ছিল, ছিল তীব্র গতি, চালকের কানে ছিল ফোন।

সেই কুয়াশা, নিয়ম-হারা গতি, কানে ফোন— ভান্ডারদহের সেতু ছুঁয়ে হুহু করে ছুটে যাওয়া বাসে, হ্যাঁ এখনও। সেতুর নীচে কালো জল দেখে এক বছর আগের সেই সকালটার কথা মনে পড়ে না আপনার? বহরমপুর-শিকারপুর রুটের একটি বেসরকারী বাসের চালক কান থেকে ফোন নামিয়ে হাসছেন। বলছেন, ‘‘অত মনে রাখলে চলে....ফোন এলে তো ধরতেই হয়!’’

Advertisement

আর, তাই দুর্ঘটনাও ওঁত পেতে থাকে। যেমন ছিল সে দিন, ভাণ্ডারদহের জলে। ৪৪টি প্রাণ হারা সেই দুর্ঘটনার পরে পুলিশ রাঙা চোখ দেখিয়েছে। রাস্তায় চুপিসারে বসেছে ক্যামেরা। কিন্তু চালকের অন্দরে সচেতনতার সেই জানলাটা খুলল কি!

পরিচিত সমাজতাত্ত্বিক আর এস গ্যডগিল ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘মনের উপরে যে ছায়া, সেটার স্থায়িত্ব সব সময় খুব প্রলম্বিত হয় না। তার উপর ধুলো পড়তে সময় লাগে না বেশি। যা আশু, যা প্রয়োজনীয় মনে করে মানুষ, সেটাকেই ধ্রুব বলে ধরে নিয়ে সেই

ছায়াটা ভুলে যেতে থাকে সে।’’ যেমন মানুষ ধীরে ধীরে ভুলে গিয়েছে ভাণ্ডারদহের ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার কথা। ওই রুটের বাস চালকদের সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যায় কথাটা তেমন সারবত্তাহীন নয়। একটু ভোরের দিকে, না হয় সন্ধের নিভুনিভু হেড লাইটের আলোয় রাস্তা দেখা না যাক, কানে ফোন নিয়ে অনর্গল অদরকারি কথার ফুলকি থামে না। পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলছেন, ‘‘ওই দুর্ঘটনার সময়ে চালক মোবাইলে কথা বলছিলেন। এ নিয়ে কোনও কুয়াশা নেই। কিন্তু, এত প্রচারের পরেও সে ব্যাপারে চালকদের হুঁশ আর ফিরল না!’’ চেষ্টার অবশ্য কসুর করেনি পুলিশ। ওই ঘটনার পরে কানে ফোন নিয়ে গাড়ি চালাতে দেখলে ইতিমধ্যে ১০৮২টি কেস রুজু করেছে পুলিশ। কিন্তু না শোধন বলতে যা বোঝায়, তা হয়নি।

মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামল সাহাও মেনে নিচ্ছেন, ‘‘আমরা সব সময়েই চালকদের বলেছি, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা নয়। সাসপেন্ডও করেছি। তবু তাঁরা যে শুধরে গিয়েছেন, এমনটা বলি কী করে!’’ মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক জয়দেব মণ্ডলের কথাতেও একই সুর, ‘‘গাড়ি চালানোর সময়ে মোবাইলে কথা বলতে কত বার যে নিষেধ করেছি। শুনলে তো!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন