River Erosion

River Erosion: ভাঙনে কোণঠাসা ঘাটে অস্তিত্বই ঝুঁকির

এই যাত্রা কতটা ঝুঁকির তা নিয়ে ভাবার অবকাশ এই ভাঙন বিধ্বস্ত এলাকার বেশির ভাগ মানুষেরই সত্যি বলতে নেই। কিন্তু তা বলে ঝুঁকি নেই, তা তো নয়।

Advertisement

অমিত মণ্ডল

কল্যাণী শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:২১
Share:

মালোপাড়ার খেয়া। নিজস্ব চিত্র

বর্ষার শেষ লগ্নে ভরা গাং। পিছল ঘাট, নৌকায়-ভেসেলে গাদাগাদি। একটু অসতর্কতায় ডুবতে পারে তরী। লাইফ জ্যাকেট রয়েছে গায়ে? কতটা বাঁধা আছে নিরাপত্তার আটঘাট?

Advertisement

ভাঙনের মুখেই দাঁড়িয়ে আছে ছোট্ট একটি খেয়াঘাট। ভাঙনের সঙ্গে তার পরিচয় জন্মলগ্ন থেকেই।

Advertisement

চান্দুরিয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে এক সময় ১৩টি গ্রাম সংসদ থাকলেও এখন দাঁড়িয়েছে পাঁচটি গ্রাম সংসদে। ভাঙন গ্রাস করেছে বাকিটা। প্রতি বছরই বাসিন্দারা বাস উঠিয়ে চলে যাচ্ছেন অন্যত্র।

সেখানেই মালোপাড়া খেয়াঘাট, ব্লক কল্যাণী।

জন্মলগ্নে ঘাটটি যে জায়গায় ছিল, ভাঙনের ঠেলায় অনবরত সরতে সরতে নিরাপত্তাহীন এক কোনায় এসে ঠেকেছে এখন। সেখানেও ভাঙন ধরেছে। তবু খেয়াঘাটকে প্রায় জোর করেই জায়গা ধরে রাখতে হয়েছে। এলাকার মানুষের মাঠের ফসল তা না হলে ভাগীরথী পার করে হুগলির বাজারে যাবে কী করে? আবার হুগলি জেলার মানুষও এ পারের জমিতে চাষাবাদ করতে আসেন।

মালোপাড়া থেকে ভাগীরথী পেরোলে অন্য পারে বাণেশ্বরপুরের ঘাট। রোজই মালোপাড়া, বিশ্বাসপাড়া আর নতুনপাড়া, এই তিনটি সংসদের প্রায় তিনশো-চারশো মানুষ পারাপার করেন। বেশির ভাগই চাষি, অফিস যাত্রী হাতে গোনা। এ পার থেকে জমির পটল, কলা, উচ্ছে যায় হুগলির জিরাট, খামারগাছিতে। এখন একটিই মাত্র লঞ্চ চলে, সকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আরও দু’টি ছোট লঞ্চ আছে, যাত্রীর চাপ বাড়লে সেগুলি চালু করা হয়। বড় লঞ্চটিতে ১০০ জনের যাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও এখন করোনকালে এক-এক বারে ২০-৩০ জনের বেশি হয় না। ভাড়া জন প্রতি পাঁচ টাকা, মোটরবাইক ১০ টাকা।

এই যাত্রা কতটা ঝুঁকির তা নিয়ে ভাবার অবকাশ এই ভাঙন বিধ্বস্ত এলাকার বেশির ভাগ মানুষেরই সত্যি বলতে নেই। কিন্তু তা বলে ঝুঁকি নেই, তা তো নয়।

প্রথমত, পাকা খেয়াঘাট নেই। লঞ্চে ওঠার জন্য কোনও স্থায়ী সিঁড়ির ব্যবস্থাও নেই। একটি বাঁশের মাচা মতো করে তাতেই ওঠানামা হয়। লাইফ জ্যাকেট? স্থানীয় বাসিন্দা ও লঞ্চ মালিক দীপক সরকার জানান, লাইফ জ্যাকেট ও লাইফ বোয়া আছে, তবে পর্যাপ্ত পারিমাণে নেই। যেগুলো আছে তা-ও কেউ ব্যবহার করে না। যাত্রীদের প্রবল অনীহা।

চান্দুরিয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিশ্বাসপাড়ার বাসিন্দা কৌশিক মণ্ডল এ বার ১০ বিঘায় কলা চাষ করেছেন। প্রতি দিনই তাঁকে হুগলির জিরাট বা খামারগাছিতে যেতে হয়। তিনি বলেন, “লাইফ জ্যাকেট এমনিই পরা হত না। আর এখন করোনাকালে অন্য জনের পরা জ্যাকেট পরতে ভয় লাগে। সংক্রমণের ভয়।”

মালোপাড়ায় পাকা খেয়াঘাট দরকার, কিন্তু হবে না। নিত্যযাত্রীরা জানান, আগেও দু’বার পাকা খেয়াঘাট করা হয়েছিল। ভাঙনে হারিয়েছে। ভাগীরথীর পার বরাবর পাকা কংক্রিটের বাঁধন যতক্ষণ না দেওয়া হচ্ছে, কিছুই হওয়ার নয়।

মালোপাড়ার খেয়াঘাট কিন্তু বছর দুয়েক আগেও জমজমাট ছিল। করোনার সঙ্গে মন্দা এসেছে। আসার পর সেই যাতায়াত অনেকটাই কমে গিয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই এই খেয়াঘাটের দায়িত্বে আছেন দীপক। তিনি বলেন, “করোনা এত ক্ষতি করে গেল, বলে বোঝানো যাবে না। এই লঞ্চের পিছনে কত খরচ। দুই শিফটে ছ’জন কর্মী। প্রতিদিন লঞ্চ ও কর্মীদের নিয়ে গড়ে প্রায় হাজার পাঁচেক টাকা খরচ হয়ে যায়।”

এই করুণ দশা কি ঘুচবে না?

কল্যাণীর বিডিও দ্বীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওখানে পাকা খেয়াঘাট এবং জেটির জন্য ইতিমধ্যেই জেলার বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর ও সেচ দফতরের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অন্য বিষয়গুলিও দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন