স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পে শৌচাগার তৈরির জন্য মুর্শিদাবাদ জেলায় পরিবার পিছু অতিরিক্ত ৩ হাজার ২০০ টাকা কেন দিতে হবে, সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। ওই জেলায় সরকরি প্রকল্পে শৌচাগার তৈরি নিয়ে জনস্বার্থে দায়ের হওয়া একটি মামলার শুনানিতে শুক্রবার ওই প্রশ্ন তোলেন হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, কী কারণে অতিরিক্ত টাকা চাওয়া হচ্ছে, তা হলফনামা আকারে আদালতে পেশ করতে।
জনস্বার্থে ওই মামলা দায়ের করেছেন মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাক্তন সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদার। তাঁর আইনজীবী আশিস সান্যাল ও প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় জানান, দেশে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে উন্মুক্ত শৌচাগারের ব্যবহার বন্ধ করতে ১৯৫৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকার একটি প্রকল্প তৈরি করেছিল। কোনও কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বচ্ছ ভারত অভিযান প্রকল্প শুরু করে। সেই প্রকল্পে দেশ জুড়ে উন্মুক্ত শৌচাগারের বদলে পরিবার পিছু পাকা শৌচাগার তৈরির ব্যবস্থা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা এই ধরনের একটি শৌচাগার তৈরির জন্য ৯ হাজার টাকা অনুদান দেবে। আর সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার দেবে ৩ হাজার টাকা অনুদান। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্প চালু করার পরে এ রাজ্যেও ওই ধরনের শৌচাগার তৈরির ব্যবস্থা হয়। কিন্তু মুর্শিদাবাদ জেলায় পরিবার পিছু অতিরিক্ত ৩ হাজার ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে ওই শৌচাগার তৈরির জন্য। কী কারণে ওই টাকা নেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চেয়ে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শুক্রবার মামলার শুনানিতে মামলাকারীর আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার ৩ হাজার টাকা অনুদান দিলেও, রাজ্য তার অনুদান দিচ্ছে না। উল্টে যাঁদের পরিবারে শৌচাগার তৈরি হচ্ছে, তাদের কাছ থেকেই টাকা আদায় হচ্ছে। দারিদ্রসীমার তলায় থাকা পরিবারগুলি রাজ্যের এই সিদ্ধান্তে (অতিরিক্ত টাকা আদায়) বিপদে পড়েছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নথি পেশ করে আইনজীবীরা আদালতে জানান, মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। প্রশাসনের বক্তব্য, শৌচাগারের পিভিসি দরজা-সহ, জলের লাইন-সহ আরও কিছু অতিরিক্ত কাজের জন্য ওই টাকা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বলা হয়েছে, ওই সব কাজও প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে। কোনও অবস্থাতেই অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার কথা প্রকল্পের নির্দেশিকায় বলা হয়নি। ওই আইনজীবীদের সওয়াল শুনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সরকারি আইনজীবী তপন মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চান, কী কারণে ওই টাকা আদায় হচ্ছে। তপনবাবু জানান, তাঁর কাছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর স্পষ্ট কোনও উত্তর নেই। তিনি জেনে আদালতকে জানাবেন। তবে, তপনবাবু জানান, বালি, সিমেন্ট, ইটের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে ওই টাকা নেওয়া হয়ে থাকতে পারে।
তপনবাবুর জবাবে সন্তুষ্ট হয়নি ডিভিশন বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনকে তার বক্তব্য হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। মামলাকারীরা সেই হলফনামার জবাব দেবেন, তার দু’সপ্তাহের মধ্যে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি।