জাল নোটেই বাজার মাত

জাল নোটের কারবারে বার বার উঠে এসেছে পারলালপুর ও পার দেওনাপুরের নাম। পুলিশের কাছে জাল নোটের কারবারের মুল ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত পার দেওনাপুর।

Advertisement

বিমান হাজরা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৯ ০০:০৯
Share:

নোট বাতিলের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল জাল নোটের রমরমা ঠেকানো। পুলিশ, বিএসএফ, এনআইএ এমনকি সাধারণ মানুষও তাই নোট বাতিলে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু নোট বাতিলের পর তিন মাস কাটতে না কাটতেই ফের নতুন নোটই জাল করে বৈষ্ণবনগরের পথ ধরে ফরাক্কা ও শমসেরগঞ্জে আসতে শুরু করে জাল নোট। আগে নোট ছিল এক হাজারের, ফলে জাল নোট পাচারের অঙ্কও ছিল কম। এখন নতুন নোট দু’হাজারের। ফলে জাল নোট পাচারের ঘটনার সংখ্যা কমলেও টাকার অঙ্কে পরিমাণ বেড়েছে।

Advertisement

জাল নোটের কারবারে বার বার উঠে এসেছে পারলালপুর ও পার দেওনাপুরের নাম। পুলিশের কাছে জাল নোটের কারবারের মুল ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত পার দেওনাপুর। সীমান্ত পেরিয়ে জাল নোট প্রথম এসে জমা হয় এই গ্রামে। পরে তা ছড়িয়ে পরে মহব্বতপুর, চর অনন্তপুর, শোভাপুর, হাজিনগর-সহ আশপাশের গ্রামের মধ্যে। সেখান থেকে নৌকোয় ধুলিয়ানের জলপথ পার। সব চেয়ে নির্জন ও নিরাপদ এই পথে ধুলিয়ান পর্যন্ত পৌঁছতে কোনও সমস্যা নেই। এক বার ধুলিয়ান পেরোতে পারলেই চাঁদপুর হয়ে সোজা পাকুড়, কিংবা ফিডার ক্যানাল ধরে ফরাক্কা হয়ে বারহারোয়া। দু-চার জন সিভিক ছাড়া এই পথে দেখা মেলে না পুলিশেরও। তাই একেবারে নিরাপদে ঝাড়খন্ড।

এক পুলিশ কর্তা বলেন, “বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উঠে এসেছে বিভিন্ন রাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজে যাওয়া তরুণদের প্রলুব্ধ করে ব্যবহার করা হচ্ছে জাল নোট পাচারের কারবারে। মোটা অঙ্কের কমিশনের লোভে পড়ে জাল নোট ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছে তারা অনেকেই।

Advertisement

কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগর দুষ্কৃতীরা যে ঘাঁটি গাড়ছে তা নিয়ে চার বছর আগেই সতর্ক করা হয়েছিল রাজ্য সরকারকে। ২০১৫ সালেই ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক প্রশ্নটা তুলেছিলেন বিধানসভায়। রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানিয়েছিলেন, কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগরে নজরদারি না বাড়ালে ভবিষ্যতে জাল নোট-সহ চোরাপাচারের ঘাঁটি হয়ে উঠবে সেগুলি। বিধায়ক মইনুল হক বলছেন, “আমাদের আশঙ্কা ছিল পাশের এলাকা হিসেবে এই সব চোরা পাচারের প্রভাব পড়বে ফরাক্কা, শমসেরগঞ্জ ও সুতিতে। মোটা কমিশনের লোভে পড়ে রাতারাতি বড়লোক হতে ফাঁদে পড়বে এই এলাকার তরুনেরাও।”

ফরাক্কার সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক আবুল হাসনাত খান বলছেন, “এমনিতেই ফরাক্কা থেকে সুতি সর্বত্রই না আছে কোনও শিল্প, না আছে আয়ের পথ। আয় বলতে বিড়ি বাঁধা। তাতেও ৯৫ শতাংশই মহিলা শ্রমিক। বিড়ি’র মজুরি বাড়লেও কাজ এতটাই কমেছে যে সপ্তাহে তিন চার দিনের বেশি কাজ জোটে না তাদের। তাই বেশির ভাগ তরুনই ছুটছেন কাজের আশায় ওড়িশা, কেরল-সহ দক্ষিণের রাজ্যে। দু’মাস, চার মাস অন্তর ভাল আয় করে ফিরছেন তারা। হঠাত গ্রামে ফিরে দেখছেন সুতির কেরামত আলি বা শমসেরগঞ্জের অমর মন্ডলের কুঁড়ে ঘর রাতারাতি দোতলা হয়ে গেছে। আর তখনই লোভে পড়ে তারাও সামিল হচ্ছে চোরা পাচারের রাস্তায়।

জঙ্গিপুরের মুখ্য সরকারি আইনজীবী সমীর চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, “গত দু’বছরে জাল নোটের কারবারে জড়িত থাকার একাধিক ঘটনায় এই নিয়ে অন্তত ৩০ জনকে সাজা দিয়েছে জঙ্গিপুরের বিভিন্ন আদালত। বর্তমানে জঙ্গিপুরের বিভিন্ন আদালতে জাল নোটের শতাধিক মামলা চলছে। বেশির ভাগ মামলাতেই সাজা ৫ থেকে ৭ বছর। এই সাজা কাটিয়ে তারা ফের জাল নোট পাচারের ব্যবসায় নেমে পড়ছে। অথচ জাল নোটেও যাবজ্জীবন সাজা দেওয়ারও ক্ষমতা রয়েছে আদালতের। কেন্দ্রীয় সরকারকে তাই জাল নোটের দৌরাত্ম কমাতে আইন সংশোধন করে কড়া সাজার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন