চাকরির আর্জি আক্রান্তের

অ্যাসিড আক্রান্ত মমতাই ভরসা অভাবের সংসারে

ঘুমের মধ্যেই যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠেছিল মেয়েটি। পাটকাঠির বেড়া গলে অম্লরোষ আছড়ে পড়েছিল তার নিষ্পাপ মুখের উপরে। তার পর এ দোর থেকে অন্য দোরে, এ রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ছুটে বেড়ানো।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৭ ০০:০৪
Share:

মমতা সরকার

ঘুমের মধ্যেই যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠেছিল মেয়েটি। পাটকাঠির বেড়া গলে অম্লরোষ আছড়ে পড়েছিল তার নিষ্পাপ মুখের উপরে।

Advertisement

তার পর এ দোর থেকে অন্য দোরে, এ রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ছুটে বেড়ানো। একের পর এক অস্ত্রোপচার। আর মামলার তারিখ।

তেরো বছর আগের কথা। জমি নিয়ে বিবাদের জেরে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কিশোরীর মুখে অ্যাসিড ছুড়েছিল পড়শি। এরপর মামলা আর চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে বিক্রি করে দিতে হয় জমিজমা। অভিযুক্ত প্রতিবেশি কবেই জামিনে মুক্ত। হাইকোর্টে ঝুলে রয়েছে মামলা। কিশোরীর দুই দাদাও আলাদা হয়ে গিয়েছেন। অশক্ত-সর্বস্বান্ত বাবা আর কাজ করতে পারেন না। সংসারের হাল ধরতে হয়েছে মেয়েটিকেই। সে এখন বছর বত্রিশের তরুণী।

Advertisement

কিন্তু গুটিকয় টিউশন করে কি আর সংসার চলে? তাই কিছু আর্থিক সাহায্য এবং একটি সরকারি চাকরির আর্জি নিয়ে নদিয়ার জেলাশাসকের দ্বারস্থ হলেন তেহট্টের বিনোদনগরের মমতা সরকার।

২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় অ্যাসিড আক্রান্তকে তিন লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেই অনুযায়ী পরের বছর রাজ্য সরকার এ বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করে। নদিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রিয়াঙ্কা সিংলার বক্তব্য, “ওই নির্দেশিকা জারির পরে কেউ অ্যাসিড আক্রান্ত হলে তবেই তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তবে তেহট্টের ওই মেয়েটির আবেদন রাজ্যস্তরে পাঠিয়ে দেব।” জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “আমরা ওকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি।”

২০০৪ সালে ১৬ এপ্রিল তেহট্ট ১ ব্লকের কানাইনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিনোদনগরের ঘটনা। রাতে বাড়ির বারান্দায় মায়ের পাশে শুয়েছিল মমতা। পড়শি রাজদুলাল সরকার তাঁর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে পালায় বলে অভিযোগ। মমতা বলেন, “আমার চিকিৎসা করাতে গিয়েই লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। শুধু ভেলোরেই চার লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। তিন বিঘা জমি ছিল। সব বিক্রি করে দিতে হয়েছে। তার পর তো মামলার খরচ। বড় অসহায় লাগে। তাই সরকারি সাহায্য চেয়ে জেলাশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছি।”

অ্যাসিড হামলার আগেই মমতার মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়ে গিয়েছিল। সে ভাল ভাবেই উত্তীর্ণ হয়। ২০১১-য় মুক্ত বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে। বাবা-মাকে নিয়ে মমতার সংসার। মমতার বাবা, সত্তর ছুঁইছুঁই প্রফুল্ল সরকার কাজকর্ম আর বিশেষ করতে পারেন না।

মামলার কী অবস্থা? মমতার বাবা বলেন, “কৃষ্ণনগর আদালতে রাজদুলাল সরকারের ১০ বছর জেল হয়েছিল। কিন্তু সে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে যায়। সেই থেকে মামলা হাইকোর্টেই ঝুলে রয়েছে।” এক দিকে অর্থাভাব, তার উপরে বয়সের ভার, ফলে মামলা কী অবস্থায় রয়েছে, তার খোঁজ আর নিতে পারেন না বলে জানান বৃদ্ধ। বাবার আক্ষেপ, ‘‘মেয়েটার যা মুখের অবস্থা, বিয়েও দিতে পারিনি। কী যে হবে ওর?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন