হিমঘর স্বপ্ন, জলের দরে বিকোয় সব্জি

সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন রানিনগর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আসরাফুজ্জামান। বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন সুজাউদ্দিন। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন রানিনগর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আসরাফুজ্জামান। বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন সুজাউদ্দিন। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০২:১২
Share:

এমনিই বেহাল রাস্তা। —সাফিউল্লা ইসলাম

এলাকায় কোনও কৃষক বাজার নেই। কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য পাই না আমরা। প্রচুর সব্জি চাষ হলেও তা বিক্রির কোনও জায়গা নেই। একটা হিমঘরের খুব দরকার।

Advertisement

নাইম রেজা, সুপারিগোলা

Advertisement

ইতিমধ্যে আমরা ব্লকের শেখপাড়া ও সুপারিগোলায় দু’টি জমি বেছেছি। কৃষক বাজার করার প্রস্তাব নবান্নে পাঠিয়েছি। নবান্ন সবুজ সংকেত দিলে কাজ এগোবে।

বলিদা থেকে সেনপাড়া পর্যন্ত রাস্তাটির কিছুটা ইটের করা হয়েছে। বাকিটা এখনও মাটির। ফলে যাতায়াতে খুব অসুবিধে হয়। বর্ষায় হাটু কাদা ভেঙে পড়ুয়াদের স্কুলে যেতে আসতে হয়।

কাইমুদ্দিন শেখ, টুলটুলি পাড়া

জেলা পরিষদ ওই রাস্তাটি করছে। বাকিটা দ্রুত শেষ করার জন্য জেলা পরিষদকে আবেদন জানাব।

এলাকায় নেশাগ্রস্তদের খুব উৎপাত বেড়েছে। দিনের বেলাতেও স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ছাত্রীদের কটূক্তি করে তারা। নেশাড়ু বলে অনেকে এড়িয়ে যায়। কিন্তু কতদিন ধরে এটা চলতে পারে?

মেজারুল ইসলাম, আমিরাবাদ

বিষয়টি নিয়ে এর আগেও বহুবার পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। পুলিশের তাড়া খেয়ে সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়, পরে আবারও যেমন ছিল তেমন হয়। তবুও আবারও পুলিশের সঙ্গে কথা বলব।

এলাকায় জনস্বাস্থ্য ও কারিগরী দফতরের পানীয় জলের লাইন বসিয়েছে। কিন্তু তাতে পরিস্রুত জল মেলে না। ওই জল পরীক্ষা করে দেখেছি খাওয়ার উপযুক্ত নয়। ওই জল পরিস্রুত করা হলে ভাল হয়।

তৈমুর বিন কাশেম, বিলচাতরা

শুনেছি ওই পিএইচই জল পরিশ্রুত করার ব্যবস্থা করছে। তবুও বিষয়টি দ্রুত করার জন্য দফতরের সঙ্গে কথা বলব।

সীমান্ত এলাকার মেয়েরা লেখাপড়া শিখলেও তাঁদের কর্মসংস্থান নেই। ফলে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ কমছে। কেবল চাকরি নয়, পঞ্চায়েতের মাধ্যমে নানা প্রশিক্ষণ দিয়েও শিক্ষিত মেয়েদের স্বনির্ভর করার প্রয়োজন।

মিরাতুননেহার আলেয়া, শ্যামদাস দেয়াড়

ইতিমধ্যে আমিরাবাদ মাদ্রাসায় মহিলাদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, মোবাইল ও জরির কাজের প্রশিক্ষণের জন্য একটি সরকারি পলিটেকনিক কলেজের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তা বাস্তবায়িত হলে কর্মসংস্থান বাড়বে।

মরিচায় সংখ্যালঘু দফতরের পক্ষ থেকে একটি ছাত্রী আবাস তৈরি হয়েছে। কিন্তু চার বছর পেরিয়ি গেলেও তা চালু হয়নি। সেটি চালু হলে ছাত্রীরা উপকৃত হত।

শামসুদ্দিন সরকার, মরিচা

ইতিমধ্যেই ওই হস্টেল নিয়ে একপ্রস্ত আলোচনা হয়েছে। দ্রুত ছাত্রীদের জন্য হস্টেল খুলে দেওয়া হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদেরকে রান্নার দায়িত্ব দেওয়া হবে।

সীমান্তে চাষ করতে গেলে বিএসএফ, কখনও বাংলাদেশিদের হাতে হেনস্থা হতে হয়। এ ব্যাপারে প্রশাসন পদক্ষেপ করলে ভাল হয়।

ইমদাদুল হক, কাহারপাড়া

আমরা লিয়াজো কমিটির মাধ্যমে বিএসএফের সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু বিষয়টি যেহেতু উচ্চ পযার্য়ের কর্তাদের বিষয় ফলে স্থানীয় বিএসএফ কর্তারা অপারগ। তবে বিষয়টি নিয়ে দিল্লিতে আবেদন জানাব।

বছরের পর বছর পদ্মার ভাঙনে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ, স্থায়ী সমাধান নেই। বর্ষা এলে কয়েক বস্তা বালি ফেলে দায় সারা হয়। আর শুখা মরসুমে চুপ থাকে প্রশাসন।

বীরেন মণ্ডল, চর রাজাপুর

খুব বাস্তব অভিযোগ। এই বিষয়টি নিয়ে আগামীতে সচেতন থাকব।

এলাকায় বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্র হলেও তার পরিকাঠামো গত তেমন উন্নয়ন হয়নি। সীমান্তের সংখ্যালঘু এলাকায় মাদ্রাসাগুলিতে উন্নয়ন হলে নারী শিক্ষার প্রসার আরও ঘটবে।

সামসাদ বেগম, মালিপাড়া

একটি মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্রের বাড়ি তৈরি হয়েছে, বাকিগুলির জন্যও আমরা আবেদন জানিয়েছি। আশা করছি খুব কম সময়ে সেগুলির বাড়িও হবে।

এলাকার বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনও স্কুল বাড়ির সমস্যা আছে। সেগুলির বাড়ি তৈরি হলে সীমান্তের পড়ুয়ারা উপকৃত হব।

মহম্মদ নিজামুদ্দিন, আমিরাবাদ

বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের সঙ্গে কথা বলব।

সীমান্তে মাঠে যেতে পারি না। বিএসএফ নানা অজুহাতে হয়রানি করে, ফলে জমি থেকেও আমরা চাষ করতে পারছি না। পাশাপাশি পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে মাঠের ফসল নষ্ট হচ্ছে। দু’য়ের ভয়ে মাঠে যেতে ভয় লাগে।

মহম্মদ আফতাবুদ্দিন, উত্তর চর মাঝাড়দেয়াড়।

সীমান্তে এটি একটি বড় সমস্যা। বিষয়টি নিয়ে এক আগেও অনেকবার বিএসএফ স্থানীয় প্রশাসন ও চাষিদের নিয়ে আলোচনায় বসা হয়েছে। সাময়িক ভাবে কম হলেও রাতের অন্ধকারে মাঠের ফসল নষ্ট করে পাচারকারীরা। তবে আমরাও এর স্থায়ী সমাধান চাই।

চর সাহেবনগরে কোনও পাকা রাস্তা নেই। ইটের রাস্তাও নেই। বর্ষাকালে খুব কষ্ট হয়। স্কুলেও ছাত্ররা যেতে পারে না।

হেমন্ত মণ্ডল, চর সাহেবনগর

খুবই সত্যি কথা, কেবল চর সাহেবনগর নয়, ওই এলাকার কোনও গ্রামের রাস্তায় ইট পড়েনি। ফলে বর্ষায় সকলকে অসুবিধায় পড়তে হয়। আগের পঞ্চায়েত সমিতি উদাসীন থাকায় এমনটা হয়েছে। দ্রুত রাস্তা তৈরির চেষ্টা চলছে।

আমাদের এলাকায় প্রধান জীবিকা হল গোপালন। এলাকার দুধ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। কিন্তু এগুলি সংরক্ষণের কোনও ব্যাবস্থা নেই। কোনও চিলিং প্ল্যান্টও নেই।

তরুণকুমার সাহা, মোহনগঞ্জ

প্রাণী সম্পদ দফতরের সঙ্গে কথা বলে এলাকায় অন্তত একটা চিলিং পয়েন্ট করার আবেদন জানাব।

এলাকায় খাস জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের সমস্যা। তা নিয়ে একদিনে চারটি খুনের ঘটনাও ঘটেছে। ওই সমস্যার সমাধান করে প্রকৃত প্রাপকদের পাট্টা দেওয়া প্রয়োজন।

সাদিক মোল্লা, নবিরপাড়া

ইতিমধ্যেই ৭০ জন ভূমিহীনের নামের তালিকা আমরা পাঠিয়েছি ওই খাস জমির পাট্টা দেওয়ার জন্য। আগামীতে আরও চাষিদের মধ্যে ওই জমির পাট্টা দেওয়া হবে।

সীমান্তে বড় বাজার বলতে শেখপাড়া। কিন্তু সেখানে আলোর ব্যবস্থা নেই। নিকাশিনালা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে বাজারে জল জমে।

রেজাউল করিম, শেখপাড়া

আমিও সমস্যাটা জানি। ওই বাজারের আলো এবং নিকাশিনালা গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আশা করি শীঘ্রই ওই সমস্যার সমাধান হবে।

শেখপাড়া বাজারে খাস জমি পড়ে আছে। কিন্তু ওই জমিতে কোনও উন্নয়নমূলক কাজ হয় না। সরকার একটু নজর দিলে ওই জায়গায় মার্কেটিং কমপ্লেক্স বা অন্য কোনও উন্নয়লমূলক কাজ করতে পারে।

বাবু সরকার, শেখপাড়া

ওই জায়গায় মার্কেটিং কমপ্লেক্স ও বাসস্ট্যান্ড করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি। সরকার মঞ্জুর করলে কাজ শুরু হবে।

রানিনগর ব্লক সদর হলেও ভাল খেলার মাঠ নেই। থানা ও স্কুলের মাঠ থাকলেও খেলার উপযুক্ত নয়। স্কুলের মাঠে বর্ষাকালে হাঁটু জল জমে।

নুর ইসলাম, রানিনগর

খেলার মাঠের অভাব রানিনগরে আছে। তবে থানার মাঠে খেলার কোনও অসুবিধা নেই। আর আগামীতে কোনও জায়গা পাওয়া গেলে আমরা মাঠ গড়ব।

একে সীমান্তের এলাকায় কাজ নেই, তার পরে ১০০ দিনের কাজ করেও কোনও টাকা পাচ্ছি না। সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছেন।

মহিরুদ্দিন শেখ, চাকরানপাড়া

বিষয়টি নিয়ে আমরাও খুব বিপাকে। এলাকার উন্নয়ন প্রায় স্তব্ধ। এখন আবেদন নিবেদন চলছে আশা করছি সমাধান সূত্র একটা বের হবে।

গোধনপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে একটি বিশ্রামাগার থাকলেও তা ব্যবহারের অযোগ্য। বাস ধরতে গেলে রোগীদের রোদে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

দেদার বক্স

হাসপাতাল চত্বর নিয়ে একগুচ্ছ পরিকল্পনা রয়েছে। আগামীতে ওই বিশ্রামাগার সংস্কারের কাজ করা হবে।

চাষে বাধা, নদীতে নামতে বাধা। যে সময়ে মাছ হয় নদীতে সেই সময়ে নামতে দেয় না বিএসএফ। এ ভাবে চললে পেট চলবে কী করে?

পিন্টু মণ্ডল, চর বাসগড়া

মৎস্যজীবীদের জন্য পরিচয়পত্র করে তাঁদের হেনস্থা বন্ধের জন্য এর আগেও অনেক আলোচনা হয়েছে। আবারও হবে।

পদ্মা থেকে অবাধে বালি তোলা নিয়ে সিন্ডিকেট চালাচ্ছে মাফিয়ারা। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে।

বাবু মণ্ডল, বামনাবাদ

ওই এলাকায় গিয়ে বিষয়টি ব্লক প্রশাসনের নজরে আনি। এখন বালি তোলা বন্ধ বলেই জানি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন